স্বাভাবিক চলাফেরা করতে নিতে হয় অন্যের সাহায্য। বয়সের ভারে কমেছে দৃষ্টিশক্তি। তারপরও মনোবল যেন এখনও অটুট। দেশে যখন প্রতিদিনই করোণা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে নাম লেখাচ্ছেন বৃদ্ধরা তখনও নিজেকে সুরক্ষায় রেখে সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে গণটিকায় অংশ নিয়েছেন ১০৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা আমেনা খাতুন।
শনিবার দুপুরে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সদর ইউনিয়নের আগার অনির্বাণ শিক্ষা নিকেতন কেন্দ্রে ছেলের হাত ধরে টিকা নিতে আসেন চরলেংগুড়া গ্রামের আমেনা খাতুন। কেন্দ্রে আসার পরপরই ক্ষণিকের অপেক্ষা শেষ স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা টিকা গ্রহণ করেন তিনি।
টিকা নিয়ে আনন্দের বহিঃপ্রকাশের চিত্র ফুটে উঠেছিল আমেনা খাতুন এর চোখে মুখে। টিকা গ্রহণের পর স্বস্তির সাথে কিছুক্ষণ বসে থেকে হাসিমাখা মুখ নিয়ে আবারও ছেলেকে সাথে নিয়ে রিকশায় চড়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
শুধু আমেনা নয় কেন্দ্রে এসেছেন একই ইউনিয়নের ডাহাপাড়া গ্রামের ৯০ বছর বয়সী আদিবাসী নারী মিহিন মারাক। সারা দিন পরিবারের কর্মব্যস্ততা শেষ করে হাতে জাতীয় পরিচয় পত্র ও টিকার রেজিস্ট্রেশন কাগজ দিয়ে হাতে নিয়ে কেন্দ্রে এসেছে পাহাড়ি এলাকার আদিবাসী এই নারী। পূর্ব থেকে রেজিস্ট্রেশন করে রাখায় কেন্দ্রে আসার সাথে সাথেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় অল্প সময়ের মাঝেই টিকা গ্রহণ করেন তিনি।
পরে স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শে টিকা কেন্দ্রের বারান্দার উপর কিছুক্ষণ বসে থেকে বাড়ি ফিরে যায় তিনিও। বৃদ্ধা আমেনা খাতুন ও মিহিন মারাক মতো উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে বয়স্ক নারীদের টিকা নেয়ার প্রতি উৎসাহ ছিল অনেক।
বয়স্কদের পাশাপাশি ২৫ বয়সের বেশি নারী ও প্রতিবন্ধীদের মাঝেও টিকা গ্রহণের আগ্রহ ছিলো প্রবল। সবাই যেন নিজের ইচ্ছা থেকেই কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকেই বিকেলের শেষ সময় পর্যন্ত টিকা নিয়ে ভিড় করেছেন।
এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার ২১টি কেন্দ্রে ৪২ শত বয়স্ক নারী প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী নারীদের জন্য রাখা হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থা । বিশেষ করে উপজেলার আদিবাসী অধ্যুষিত সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নে বাঙালি আদিবাসী নারীদের অধিকার আওতায় আনতে জোর প্রচারণা ছিলো প্রশাসনের।
প্রচারণা মাফিক সাড়াও মিলেছে জনগণের। পাহাড়ি ঘেষা গ্রামগুলোর আদিবাসী নারী পুরুষ মাঝে টিকা গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে কয়েক গুণ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে ঘুরে দেখেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ টাস্কফোর্স সদস্যরা। টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কেন্দ্রে আসা প্রতিটি নাগরিকদের উৎসাহিত করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:
২৪ ঘণ্টায় করোনায় ঝরে গেছে ২৬১ প্রাণ
১০৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা আমেনা খাতুন একাত্তরকে জানান, সারাদিনই বাসায় বইসা থাকি। ছেলে মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের কাছে শুনি দেশে নাকি করোনাভাইরাস আইছে। অনেক মানুষই নাকি এই ভাইরাসে মারা যাইতেছে। এই থাইকা বাঁচতে নাকি টিকা নেয়া শুরু হইছে। ঐদিন টিভির মধ্যে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী কইতাছে সবারেই টিকা নিয়নেন লাইগ্যা। পরে আইস সকালে আমার ছেরারে কইলাম টিকা দেওনের লাইগ্যা আমারে লইয়া যাইতে। দুপুর একটা রিকশা বাহু কইরা আমারে লইয়া কেন্দ্রে আইছে। এহন আমি টিকা নিয়েছি আমি পুরোপুরি সুস্থ আছি আমার কোন সমস্যা হয় নাই।
এদিকে টিকা গ্রহণের পর ৯০ বছর বয়সী আদিবাসী নারী মিহিন মারাক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে একাত্তরকে বলেন, আমরা পাহাড়ি এলাকার মানুষ। সারাদিন পাহাড়ে পাহাড়ে আমাদের দিন কাটে। আমরা কোনদিন চিন্তা করি নাই এত তাড়াতাড়ি এই করোনা টিকা পাইয়া যামু। এখন আমরা টিকা নিছি। আমার দেখি আমাদের পাড়ার অনেকেই আইছে আইজকা টিকা নিতে। আমি অনেক খুশি এত তাড়াতাড়ি করোনার টিকা পাইছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান একাত্তরকে জানান, আমাদের সাতটি ইউনিয়নে আজ থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছি। এর আগে গতকাল আমরা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা ৬শত জন করে মোট ৪২ শত জনকে টিকার আওতায় এনেছি। এবারে গণশিক্ষায় আমরা বয়স্ক নারী, প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী নারীদের প্রাধান্য দিচ্ছি। এছাড়াও আমাদের প্রতিটি কেন্দ্রে আদিবাসী বাঙালি বয়স্ক নারীরা নিজে থেকেই স্বেচ্ছায় কেন্দ্র আসছেন এবং টিকা নিচ্ছে। তাই আমরা আগে থেকেই পূর্বপ্রস্তুতি তে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ও সেভাবেই করেছি।
একাত্তর/এসএ