মায়ের উপহার আর তার ভালোবাসা নিয়ে নরওয়ে ফিরে গেলেন দুলি ওলসেন। দীর্ঘ ৫০ বছর পর মানিকগঞ্জে মায়ের দেখা পেয়ে নরওয়ে ফিরতে মন চাইছিলো না তার। তারপরও ফিরতে হলো নিজের সন্তান আর জীবিকার তাগিদে। সাথে নিয়ে গেছেন মা আম্বিয়া খাতুনের ভালোবাসা।
তার হাতে বানানো নকশী পিঠা আর নানা উপহার। দুলি বলছেন তিনি বার বার ফিরে আসবেন মায়ের কাছে। মায়ের সাথে কথা বলার জন্য শিখছেন বাংলা ভাষা। আপাতত প্রযুক্তির সহায়তায় যোগাযোগ রাখবেন মায়ের সাথে। পরেরবার সন্তানদেরও নিজের শেকড় চেনানোর ইচ্ছে দুলির।
বৈশাখের তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে পদ্মাপাড়ের মুক্তানগরে আবারও মায়ের ঘরে ফিরেছিলেন দুলি। তীব্র ঠান্ডার দেশ নরওয়েতে তার বড় হওয়া। বাংলাদেশের গ্রীষ্মের এমন দাবদাহ তিনি অভ্যস্ত নন। তারপরও ছুটে গেছেন শেকড়ের টানে। মায়ের উঠোনে।
মাকে ছুঁয়ে থাকা আর মায়ের সাথে অচেনা ভাষায় কথা বলা। সবই ছিলো তার কাছে উপভোগ্য। যদিও জগতজুড়ে মায়ের ভালোবাসা আর হাসি কান্নার কোন অনুবাদ হয় না। সে ভাষা সর্বজনীন।
লাল সবুজের এই দেশের মেয়ে দুলির প্রিয় লাল পোশাক, সঙগী ফ্রয়েও লাল পাঞ্জাবী পরে গ্রামে গিয়েছেন। মেয়ের আর জামাইয়ের জন্য পোষাক নাতি নাতনীদের জন্য সাধ্যমতো উপহার আর ভালোবাসার নকশী পিঠা তুলে দিয়েছেন মা আম্বিয়া খাতুন। মাকেও নানা উপহারে ভরিয়ে দিয়েছেন দুলি।
মাতৃভূমি ছাড়ার আগে দুলি ওলসেন বলছিলেন; বিশাল এক পাথর জমে ছিলো তার হৃদয়ে। মাকে স্পর্শের পর বহু বছরের সেই পাথর কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেছে। মাকে ছেড়ে যেতে কিছুতেই মন চাইছে না ।
দুলির জীবন সঙ্গী ফ্রয়েন থুবও বলছিলেন তারা আবারও ফিরে আসবেন। পরেরবার সাথে আনবেন সন্তানদের। এরপর যাতে কোন দোভাষীর সাহায্য ছাড়াই মা মেয়ের কথা চলে অনর্গল; তাই এখন থেকেই বাংলা শিখছেন দুলি। আশা পরে রবার মায়ের ভাষাতেই যেন কথা বলতে পারেন।
মায়ের সাথে কাটানো মধুর স্মৃতিগুলো নিয়ে বিমানবন্দরে দুলি ওলসেন বলছিলেন, তার ৫০ বছরের জীবনে এ এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের সূচনা। যা তার কাছে দ্বিতীয় জনমের মতো। এই দেশ এই দেশের মানুষ তার জীবনে যে দ্বিতীয় জন্মের উপলক্ষটা এনে দিলো; সে জন্য আরেকবার কৃতজ্ঞ দুলি।