বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের কাছারি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দুইদিন পর আবার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কাছারি বাড়িতে প্রবেশ উন্মুক্ত করায় খুশি দর্শনার্থীরা।
শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এক দর্শনার্থীর হাতে প্রবেশ টোকেন তুলে দিয়ে কাছারি বাড়িতে প্রবেশ উন্মুক্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে কোনো প্রকার হামলার ঘটনা ঘটেনি। সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে কাছারি বাড়ি। হামলা হয়েছে মূলত কাছারি বাড়ির পাশের রবীন্দ্র অডিটোরিয়ামে। সেটাও কাছারি বাড়িকে টার্গেট করে নয় বরং প্রবেশ টোকেন নিয়ে একজন প্রবাসী দর্শনার্থীর সাথে স্টাফদের ব্যক্তিগত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
তিনি আরও বলেন, কোনো মৌলবাদ বা কোনো রাজনৈতিক কারণে এ ঘটনা ঘটেনি। সেই সাথে রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে আর কোনো নিরাপত্তার ঘাটতি নেই।
এ সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন হিরু, উপজেলা জামায়াত আমির অধ্যাপক মিজানুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী শওকত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দর্শনার্থীদের প্রবেশ উন্মুক্ত করে তারা কাছারি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি হবে। তদন্ত রিপোর্ট দেখে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন জানান, কবিগুরুর কাছারি বাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা নেই। ঘটনার সাথে জড়িত পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
এর আগে ৮ জুন প্রবাসী শাহনেওয়াজ নামের এক দর্শনার্থী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাছারি বাড়ি পরিদর্শনে গেলে পার্কিং ফি নিয়ে গেটের এক কর্মচারীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা ওই দর্শনার্থীকে অডিটোরিয়ামের ভেতরে আটকিয়ে মারধর করে এবং আহত করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শাহনেওয়াজ বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় ওইদিন রাতেই কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার দুইদিন পরও পুলিশ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিবাদে স্থানীয়রা গত (১০ জুন) শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। পরে উত্তেজিত জনতা কাছারি বাড়িতে প্রবেশ করে অডিটোরিয়ামের দরজা, জানালা ভাঙচুর করে।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুশফিকুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির কাস্টোরিয়ান হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন।