শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে কৃষকের বৈদ্যুতিক ফাঁদে একটি হাতি মারা গেছে। মৃত হাতিটির ময়নাতদন্তের পর ওই এলাকায় পুঁতে রাখা হয়েছে। এদিকে পালের এক সদস্যকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একদল হাতি। মৃত্যুর পর থেকে হাতিটির কবরের পাশে অবস্থান নিয়েছে অন্তত ৪০টি হাতি। গত দুই রাত ধরে তারা কবরের পাশে চিৎকারসহ যে কৃষকের ফাঁদে হাতিটি মারা গেছে, সেই কৃষকের ফসলের ক্ষেত পা দিয়ে মাড়িয়ে ফসলে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। রাতভর হাতিদের এমন তাণ্ডবে ভয়ে ওই এলাকার মানুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
শুক্র ও শনিবার রাতে উপজেলার উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কের উত্তরে লাল টেংগুর পাহাড়ি এলাকায় হাতির দল এমন তাণ্ডব চালিয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে ওই এলাকায় কৃষকের দেওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি পুরুষ হাতি মারা যায়। মৃত ওই হাতিকে ময়নাতদন্ত শেষে কৃষকের ক্ষেতের পাশে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই প্রতিশোধ নিতে মৃত বন্যহাতির কবরের পাশে অবস্থান নেয় প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি বন্যহাতির দল। সাথী এক হাতিকে হারিয়ে তাকে উদ্ধার করতে ওই স্থানে জড়ো হাতির দল। এসময় হাতিগুলো চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। সেই সঙ্গে হাতি হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কৃষক জিয়াউর রহমান জিয়ার ৫০ শতক বোরো ধানের ক্ষেতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পরে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে বন্যহাতির পাল পিছিয়ে যায়। কিন্তু ভয়ে রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারছেন না তারা।
এদিকে, হাতির মৃত্যুর ঘটনায় শেরপুর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আল আমিন বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় কৃষক জিয়াউল হক ও অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষক জিয়াউল হককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, সেদিন যেখানে হাতির মৃত্যু হয়েছে তার কবর ও আশপাশে দুই দিন ধরে রাতে একদল বন্যহাতি অবস্থান নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। বর্তমানে ওই হাতির দলটি মধুটিলা ইকোপার্ক এলাকায় অবস্থান করছে। কিন্তু দিনের আলোতে খুব একটা বের হচ্ছে না, সন্ধ্যা হলেই বের হচ্ছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতন ও সর্তকতা করে যাচ্ছি।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘শাইনের’ নির্বাহী পরিচালক ও শেরপুর বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মুগনিউর রহমান মনি বলেন, কেউ যদি হাতিকে ক্ষতি করে, তারা পরে তাদের প্রতিশোধও নিতে পারে। কারণ হাতির স্মৃতিশক্তি আশ্চর্যজনকভাবে শক্তিশালী। শুধু তাই নয়, হাতি এমন একটি প্রাণী যে তাদের পুরনো শত্রুদেরও চিনতে পারে এবং প্রয়োজনে প্রতিশোধ নিতে পারে।