বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় প্রকাশ্যেই চলছে পাহাড় কেটে পাথর তোলা। উন্নয়নের নামে ব্যক্তি ও প্রভাবশালী একটি চক্র দিনের পর দিন হাইকোর্টের আদেশ না মেনে পরিবেশ ধ্বংসে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলার আলুবাগান, গুয়াবাড়ি, মোকামপুঞ্জি, শ্যামপুর, খড়মপুর, শ্রীপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ে গর্ত করে কাটা হচ্ছে পাহাড়ের বুকে। বিক্রি করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ পাথর।
জৈন্তাপুর ছাড়াও সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে একইভাবে পাহাড় কাটা।
এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৬-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া, বেলার একটি রিটের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ- প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরবতা কিংবা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এ অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে পাহাড়ের মাটি ও পাথর উত্তোলনের পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে বসতবাড়িও। যা ভবিষ্যতে প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি করছে।
তারা জানান, পাহাড় কাটা ও মাটি সরিয়ে নেওয়ায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফেলে নিচু এলাকা জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বর্ষা এলে এসব পাহাড়ি এলাকার বসতবাড়ি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তাদের শঙ্কা, পাহাড় ধসে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে, যেমনটি অতীতে ঘটেছে চট্টগ্রামের লালখানবাজার বা বান্দরবানে এবং সিলেটের চামেলি বাগে। গত বছর যেখানে পাহাড় ধ্বসে মৃত্যু হয় তিন জনের।
বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় বড় ধরণের ভূমিধ্বসের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে পরিবেশবাদীরাও।
সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও পরিবেশবিদ ড. মো. জহিরুল হক শাকিল একাত্তরকে বলেন, পাহাড় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। এই পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে শুধু পরিবেশ বিপর্যয় নয়, মানুষের জীবন-জীবিকাও হুমকিতে পড়বে। হাইকোর্টের আদেশ কার্যকর করতে হবে কঠোরভাবে।
তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন দৃশ্যমান আইন প্রয়োগ। আইনের লঙ্ঘনকারীদের দ্রুত বিচার এবং শাস্তি নিশ্চিত না করলে এ অবস্থা চলতেই থাকবে।
তিনি মনে করেন, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ একাত্তরকে বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।