এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার রাতে দিকে সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন জাবির রেজিস্টার আবু হাসান।
তিনি বলেন, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরপরই জনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রেজিস্টার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৪ (জ) ধারা অনুযায়ী চাকুরিচ্যুতি হয়েছে মাহমুদুর রহমান জনিকে।
আর এই ধরায় ব্যবস্থা নেয়ার ফলে, বরখাস্ত হওয়া জনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরকালীন কোনো ধরনের ভাতা বা সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি চাকরিতেও তিনি যোগ দিতে পারবে না।
মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে প্রথম যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর। জনি ও একই বিভাগে নিয়োগ পাওয়া এক নারী প্রভাষকের একটি অন্তরঙ্গ ছবি দিয়ে জাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে পোস্টার সাঁটানো হয়। পোস্টারে লেখা হয়, এভাবেই ললিপপের ভেল্কিতে শিক্ষিকা হলেন...।
আর মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। সে সময় তার বিভাগে শিক্ষক পদে আবেদন করা জাবির ৪৩ ব্যাচের এক ছাত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ কথাবার্তার অডিও ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য চাকরির জন্য আবেদন করলেও জনির বিভাগে তা পাননি ওই নারী।
ওই অডিওর কথোপকথনে বলতে শোনা যায় যে, মাহমুদুর রহমান জনি ভুক্তভোগীকে নারীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করিয়েছেন। ওই সময় জনির সঙ্গে ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রীর ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক ও ‘অশালীন’ আলাপের ছবি ও তথ্য সামনে আসে।
এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই জনির বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। আর জনিকে সরিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রোক্টরের পদ থেকে।
অভিযোগ ওঠার পর ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মাহমুদুর রহমান জনির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তবে জনি তাকে বিভিন্নভাবে চাপ ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখেন। আর এসব প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে দিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি দায় মুক্তিপত্র লিখিয়ে নেয়।
তবে দায় মুক্তির চিঠি লেখানোর পরই মাহমুদুর রহমান জনি সুর পাল্টে ফেলেন বলে তখন অভিযোগ তোলন ওই নারী। বলেন, ‘সে কথা রাখেনি এবং যথারীতি একজন প্রতারক।’
জনির বিরুদ্ধে দায় মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগ উঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। আর এ ঘটনায় জনির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে জাবি প্রশাসনকে চিঠি দেয় ইউজিসি।
এদিকে জনিকে দায় মুক্তি দেয়া হতে পারে এমন শঙ্কায় জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবারো আন্দোলন শুরু করে।
আর এরি মধ্যে ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর গত বছরের ১০ আগস্ট তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে, যেখানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার করা জানানো হয়। এরপরই মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গঠন করা হয় স্ট্রাকচার্ড কমিটি।
মাহমুদুর রহমান জনি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৬ ব্যাচের ছাত্র। ২০১২ সালে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
আর ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান জনি। পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠতে শুরু করে।