ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে আবার আলোচনায় দেশের উচ্চশিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ফলে আসলেই কি বিশ্ববিদ্যালয়টি সুফল পাচ্ছে, নাকি এ ঘটনার আড়ালে সেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থার চাষাবাদ বাড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবারই।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে দেশের শীর্ষ এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। সোমবার হাইকোর্টের আদেশে তা আবার চালু হয়েছে।
বুয়েটই একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে রাখা হয়। আর এই সুযোগে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা বুয়েটকে তাদের আখড়া বানাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।
এই উদ্বেগ যেমন আসছে রাজনৈতিক সংগঠন থেকে, তেমনি আসছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ছাত্রনেতা ও পেশাজীবীদের কাছ থেকেও।
সোমবার দুপুরে বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
এ সময় বুয়েটে সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান বুয়েটেরই প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি আবদুস সবুর।
তিনি বলেন, মূলধারার রাজনীতি বন্ধ করে জঙ্গিবাদী রাজনীতি যেনো মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন।’
২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে।
গত বুধবার বুয়েট ক্যাম্পাসে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতা। এ ঘটনা ভালোভাবে নেয়নি সেখানকার ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে থাকা কিছু শিক্ষার্থী।
তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দাবি তুলেছেন।
কিন্তু এবার ছেড়ে কথা বলেনি ছাত্র সংগঠনগুলো। এবারের ঘটনার শুরুতেই ছাত্র রাজনীতির পক্ষে কথা বলেন বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
তাদের দাবি, বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় চলমান আন্দোলনের পেছনে ‘অন্ধকার সংগঠনের’ ইন্ধন রয়েছে।
মূলধারার ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির বুয়েটে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও ওই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালুর জন্য আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে 'অন্ধকারের রাজনীতি'র চাষাবাদ হচ্ছে।
ভিসির সঙ্গে বৈঠকে আইইবির সভাপতি আবদুস সবুর বলেন, বুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত। এতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম যেনো ব্যাহত না হয়।
সবার কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে এই প্রকৌশলী প্রশ্ন করেন, বায়বীয় ঘটনার মাধ্যমে মব তৈরি করে বুয়েটকে পিছিয়ে দিতে চায় কে বা কারা।
ছাত্র রাজনীতির নিষিদ্ধ করার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে যারা বাধা সৃষ্টি করে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ যেনো জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে না পড়ে তাই সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
ভিসির সঙ্গে সাবেক ছাত্রনেতাদের বৈঠকের পরপরই হাইকোর্ট থেকে আদেশ আসে যে, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে। একই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন।
আর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ওই প্রজ্ঞাপনকে কেনো অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের আদেশের পরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ এখনো পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নিবো। কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। আদালত অবমাননা তো করতে পারবো না।’
উপাচার্য বলেন, বুয়েটের অ্যালামনাইরা শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন। ওনারা মুক্তধারার রাজনীতি চর্চা ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন।