নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আবারও সরব হয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। যদিও ইউজিসি ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকেবি)’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, তবুও এর অনেক কিছুরই বাস্তবায়ন দেখছেন না তারা। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো পূরণ না হলে দিয়েছেন মাঠে থাকার হুশিয়ারি।
শনিবার (১৭ মে) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকেবি)’ নিয়ে ইডেন মহিলা কালেজের সামনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সরকারি সাত কলেজকে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনে কর্তৃপক্ষের কালক্ষেপণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী কর্মসূচি জানাতে জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে ইউজিসি ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকেবি)’ নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু অধিভুক্তি বাতিলের পর এখনও অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পর সেটি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, আমরা পাঁচ দফা দাবি জানাচ্ছি-
১। রোববারের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
২। অন্তর্বর্তী প্রশাসকের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সেশনজট নিরসনসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে ভুতুড়ে ফলের সমাধান, বিভিন্ন ইস্যুতে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধসহ যাবতীয় অসঙ্গতিগুলো স্পষ্টভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
৩। অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা এবং লোগো/মনোগ্রাম প্রকাশ করতে হবে।
৫। আগামী এক মাসের অর্থাৎ আগামী ১৬ জুনের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
পরে এক প্রেস বিজ্ঞপিতে বলা হয়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের সাত কলেজের এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। শুরু থেকেই আমাদের দাবি ছিল—সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি বাতিল করে এ কলেজগুলোর সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় সাত, কলেজের শিক্ষার্থীরাও সরকারকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবির যৌক্তিকতা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। ফলে একদিকে ঢাবি কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে; অন্যদিকে সরকারও আমাদের সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইতিমধ্যে ইউজিসি ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকেবি)’ নামে আমাদের সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাব করেছে। আমরা জেনেছি, নাম ছাড়াও নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও মডেলও প্রস্তুত রয়েছে। ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও মডেল প্রকাশ করা হবে।
সাত কলেজের ঢাবি অধিভুক্তি বাতিলের পর চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি এ কলেজগুলো পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রস্তাব করে—যে প্রশাসন অধিভুক্তি বাতিল ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালন করবে। তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসন বিষয়ে ইউজিসির প্রস্তাবনার আড়াই মাস পার হলেও এখনো সেটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি। এতদিন আমরা শুনে এসেছি, এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শুরু থেকে আমরা একটি শ্রেণিকে সাত কলেজকে আন্ডারস্টিমেট করার প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। আবার আমাদের সবকিছুতেই যেন ইচ্ছাকৃতভাবে ঢিলেমি দেওয়া হচ্ছে। সরকার সাত কলেজের এ সমস্যা সমাধানে গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয়। একই সঙ্গে এ সমস্যা সমাধানে তাদের চার মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু গত ৩০ এপ্রিল এ কমিটির সময়সীমা শেষ হলেও এখনো সমস্যার সমাধান হয়নি। আমরা এমন সময়ক্ষেপণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তাদের অভিযোগ, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন দেওয়ার কথা থাকলেও তা কোনো এক অদৃশ্য কারণে এখনো ঝুলে আছে। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামো, একাডেমিক কার্যক্রম, পরীক্ষাসহ সবকিছুতেই আমাদের এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে।
তারা জানান, শুক্রবার রাতে সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ও বর্তমান পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সাত কলেজের জন্য প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এরপর এটি এখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ প্রশাসন ঘোষণা করা হবে। আমরা তার আশ্বাসেও ভরসা রাখতে চাই।
আমরা শুরু থেকেই সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। দাবি বাস্তবায়নে আমরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতাও করেছি। এজন্য মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি টেবিলের আলোচনাও জারি রেখেছি। এখনো আলোচনার পথ বন্ধ হয়নি। আমরা আলোচনায় প্রস্তুত আছি। আমরা আমাদের শিক্ষার অধিকারটুকু চাই।