দেশে শিশুদের ডায়াবেটিস বাড়ছে। অসংখ্য শিশু কিশোর এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু বয়সেই ইনসুলিন নিতে হচ্ছে এমন রোগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ডায়বেটিক সমিতির হিসাবে বছরে গড়ে দেড় লাখ শিশু এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ সময় বাবা মায়েরা বুঝতেই পারেন না কখন থেকে তার শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলো। চিকিৎসকরা বলছেন, বদলে যাওয়া জীবনযাপন ও খাদ্যাভাসই এর জন্য দায়ী।
বিশ্বে প্রতি এক লাখ শিশুর মধ্যে চারজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু, দুই ধরনের ডায়াবেটিসই ধরা পড়ছে শিশুদের। টাইপ ওয়ানের মূল কারণ শরীরে প্রাকৃতিক ভাবে ইনসুলিন তৈরি না হওয়া। কম বয়সেই এর উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্ত শিশু দিন দিন শুকিয়ে যায়। ঘন ঘন প্রস্রাব করে আর দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে কিটোসিসে আক্রান্ত হবার ঘটনাও ঘটছে।
টাইপ টু ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিনের ক্ষমতা কমে যায়। যাদের ওজন ও শরীরে মেদ বেশি, কায়িক পরিশ্রম করে না, তাদের এটি হবার শঙ্কা বেশী। তবে দুই ধরনের ডায়াবেটিসেই জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্যও এর জন্য দায়ী। বেশিরভাগ সময়ই বাবা মায়েরা বুঝতে বুঝতেই পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়।
বারডেম হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: সাবরিনা জসীম বলেন, শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিসের উপসর্গ দেখা দেয় তুলনামূলক কম বয়সে। আক্রান্ত শিশু দিন দিন শুকিয়ে যায়, ঘন ঘন প্রস্রাব করে আর দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে- এমনকি রক্তে শর্করা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় কিটোসিস হয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস একটু বেশি বয়সের শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের দেখা যায়। যাদের ওজন বেশি, শরীরে অতিমাত্রায় মেদ, কায়িক পরিশ্রম করে না, তাদের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে উভয় ক্ষেত্রেই কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য এ রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া বিভিন্ন হরমোনের অসামঞ্জস্যতা বা কিছু ওষুধের কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন? শিশু অতিমাত্রায় প্রস্রাব করে, নতুন করে বিছানায় প্রস্রাব করতে শুরু করে। পিপাসা ও ক্ষুধা বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত খাবার খেলেও ওজন বাড়ে না বা দ্রুত ওজন কমতে থাকে। শরীর দুর্বল লাগে, দৈনন্দিন কর্মে আগ্রহ কমে যায়, ঘন ঘন সংক্রমণের শিকার হতে পারে।
জটিলতা সৃষ্টি হলে শ্বাসকষ্ট, বমি, পেটে ব্যথা, খিঁচুনি ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়- এমনকি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে, যাকে ‘ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস’ বলা হয়। দ্রুত চিকিৎসা না করালে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে এসব উপসর্গ নাও থাকতে পারে। মেদবহুল, স্থূল শিশু, ঘাড়ের ত্বকে কালো দাগ, কিশোরীদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকতে পারে।
সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা মূলত নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন। টাইপ-২ ডায়াবেটিস ইনসুলিন ছাড়াও ১০ বছরের বেশি বয়স হলে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যতালিকা মেনে চলা ও বয়স অনুযায়ী কায়িক পরিশ্রম অপরিহার্য।
শিশুদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সারাদেশে চিকিৎসা সেবা বাড়ানোর কথা বলছেন ডায়েবেটিকস রোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। আর বাবা মায়ের সচেতনতা, শিশুদের খাদ্যাভাস, মোবাইল বা টিভি দেখা কমিয়ে আনা সেই সাথে খেলাধুলাসহ শারীরিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।