ইরানের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কে যাকে বলে সাপে নেউলে! দু’দেশের মধ্যে সুদীর্ঘ দিন ধরে চলছে ছায়াযুদ্ধ। এরই মধ্যে সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে, কয়েকজন ইরানি সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক আইন-কানুনকে তোয়াক্কা না করে, এ ধরনের হামলায় ভীষণ ক্ষুব্ধ ইরান। জানিয়েছে, এর জবাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা অনিবার্য। শুধু সময়ে অপেক্ষা।
এখন প্রশ্ন উঠছে, কিভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালাবে ইরান? দেশটির হুঁশিয়ারির পর অনেকেই মনে করছেন, খুব শিগগিরই হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ, ইরান-ইসরাইল লড়াইয়ে পরিণত হবে। তেহরান অনেক আগে থেকে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন প্রক্সি গ্রুপের মাধ্যমে ইরান ছায়াযুদ্ধে আছে। বিষয়টি সব সময়ই অস্বস্তির ছিলো তেল আবিবের জন্য। বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি নেতানিয়াহু সরকার।
ফলে গাজায় যুদ্ধ শুরু হবার পর ইসরাইলের ‘ফ্রি টার্গেটে’ পরিণত হয় সিরিয়া। দেশটিতে প্রতিনিয়ত হামলা চালিয়ে ইরানের বেশ কিছু গোয়েন্দা স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি কর্মকর্তাদেরও হত্যা করেছে তেল আবিব। ফলে ইরানের ওপর কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য অনেক বেশি অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন দামেস্কে হামলার পর ইসরাইলে সরাসরি হামলা চালানো ছাড়া বিকল্প নেই ইরানের।
তাহলে কোন উপায়ে এগুবে ইরান? বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই সরাসরি হামলায় যাবে না, তেহরান। প্রথম দিকে তেল আবিবের বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধ চালাবে ইরান। আর এক্ষেত্রে এরিমধ্যে এগিয়ে গেছে খামেনির দেশ। নানা ধরনের কার্যকরি হুমকি ছড়াতে সফল হয়েছে ইরান, যা ইসরাইলের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। স্নায়ুযুদ্ধের পাশাপাশি প্রক্সিদের দিয়ে ইসরাইলকে চারিদিক থেকে উত্যক্ত করবে ইরান।
মধ্যপ্রাচ্যে জুড়ে ইরান সমর্থিত অনেকগুলো মিলিশিয়া গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রুপটি হলো হিজবুল্লাহ, যারা উত্তর ইসরাইলের শহর ও সেনা ঘাঁটিতে প্রায়ই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। কিন্তু গ্রুপটি সর্বাত্মক যুদ্ধ থেকে বিরত রয়েছে। এর কারণ, লেবাননের বেশির ভাগ লোক নিজেদের দেশে যুদ্ধে টেনে আনতে চায় না। আরেকটি কারণ হলো, ইরান তার সবচেয়ে দরকারি প্রক্সি ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি বলেছেন, প্রক্সিদের মাধ্যমে হামলা না চালিয়ে ইরানের উচিৎ, সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানানো। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের সাহসী যোদ্ধাদের হাতেই শয়তানি শাসকদের শাস্তি দেয়া হবে। এটি খামেনির ফাঁকা বুলিও হতে পারে। কারণ ইরান সব সময়ই ময়দানে নিজে না গিয়ে, অন্যদের দিয়ে লড়াই চালাতে পছন্দ করে।
তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানাচ্ছে, ইরান ড্রোন ও ক্রুস মিসাইল হামলার পরিকল্পনা করছে। তবে কখন ও কোন জায়গায় এই আঘাত করা হবে সেটি অজানা। ড্রোন ও মিসাইল হামলা ইরাক ও সিরিয়ার মাটি থেকে, নাকি ইরানের ভেতর থেকে পরিচালনা করা হবে, সেটিও এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি মার্কিন গোয়েন্দারা। কিন্তু জোর দিয়ে বলেছে, ইরান পাল্টা আঘাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান ইসরাইলের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হতে চায় না। তবে ইসরাইলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় তারা হামলা চালাতে পারে। এসবের জন্য ইরানের হাতে বেশ কিছু বিকল্প আছে। মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতির একটি প্রধান খেলোয়াড় ইরান এই অঞ্চলে নিজেদের আদর্শগত মিত্রদের নিয়ে একটি প্রতিরোধ অক্ষ গড়ে তুলেছে। যাদের দিয়ে ইসরাইলে বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে ইরান।
এসব মিত্রদের মধ্যে রয়েছে, ইয়েমেনের হুতি, ফিলিস্তিনের হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাকের কাতাইব হিজবুল্লাহ এবং সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকার। এসব মিত্রদের বড় সুবিধা হলো, সবার হাতে রয়েছে নিজস্ব সামরিক বাহিনী এবং তারা নিজ দেশের সরকারের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং তেহরানের নির্দেশনাকে এসব মিত্ররা শিরধোর্য মনে করে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে এসব মিত্রদের আরও সক্রিয় করতে পারে ইরান।
ইরান আরেকটি উপায়ে জবাব দিতে পারে। সেটি হচ্ছে- তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির নকশা পুনরায় শুরু করা। এতে করে ইসরাইল-মার্কিন দুই আগ্রাসনকে রুখে দিতে পারবে তেহরান। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরমাণূ কর্মসূচি এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তেহরান নিজে ও প্রক্সিদের দিয়ে ইসরাইলকে সব সময়ই চাপে রাখবে। তেল আবিবের রাতে ঘুম হারাম করে দেয়ার জন্য তথ্যভীতির সঞ্চার ঘটাবে তেহরান।
এরই অংশ হিসাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইসরায়েলি দূতাবাসগুলো নিয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে ইরান। ইসরাইলের কোনো দূতাবাসই আর নিরাপদ নয়, বলছে ইরান। এমনকি প্রস্তুত রাখা হয়েছে কয়েকটি ধরনের হাজারো ক্ষেপণাস্ত্র। ইসরাইলে আঘাত করতে সক্ষম ইরানের এমন ৯ রকম ক্ষেপণাস্ত্র আছে। তবে, কি একই কায়দায় ইসরাইলের ওপর প্রতিশোধ নেবে ইরান?