রেকর্ড বৃষ্টিতে বন্যায় ভাসছে মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির ইতিহাসে এমন টানা ভারী বর্ষণ আগে কখনও হয়নি। এর ফলে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক শহর হিসেবে বিবেচিত দুবাই এখন বিশ্ব সংবাদের শিরোনাম। শহর শুধু তলিয়েই যায়নি, সেই সঙ্গে অচল হয়ে পড়েছে দুবাই বিমানবন্দর।
আমেরিকার আটলান্টার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিমানবন্দর দিয়ে গেলো বছর প্রায় আট কোটি যাত্রী ব্যবহার করেছেন। সেটি এখন কার্যত অচল। অন্যদিকে বিপর্যস্ত শহর। প্রশ্ন জাগছে, দুবাইতে এতো বৃষ্টি কি নাশকতা না কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঝরানো হয়েছে, নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
তাহলে, বৃষ্টিপাত কতটা অস্বাভাবিক ছিলো এবং প্রচণ্ড বর্ষণের পেছনে কারণগুলিই বা কী ছিলো? বিজ্ঞানীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিরল এই বৃষ্টির মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্লাউড সিডিংয়ের কারণেও এই বৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
ক্লাউড সিডিং হলো কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি হওয়ার এক পদ্ধতি। এতে ছোট বিমান মেঘের ভেতরে যায় এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে মেঘের মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক ছিটিয়ে দেয়, যা মেঘের সঙ্গে বিক্রিয়ায় বৃষ্টির সৃষ্টি করে। কয়েক দশক ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর ইতিহাস আছে আমিরাতের।
উড়োজাহাজ বা ড্রোন দিয়ে সিলভার আয়োডাইডের মতো ক্ষুদ্র কণা নিক্ষেপ করে মেঘে আর্দ্রতাকে ঘনীভূত করার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানো হয়। তবে দুবাই প্লাবিত হবার পরপরই কয়েকজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী তড়িঘড়ি করে ভুল তথ্য দেন। তারা বলেন, বন্যার কারণ সাম্প্রতিক কৃত্রিম বৃষ্টির চেষ্টা।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামাতে রোববার ও সোমবার উড়োজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার অর্থাৎ বন্যার দিন হয়নি। অবশ্য কোন সময় কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর ঘটনাটি ঘটেছে, তা আলাদাভাবে নিরপেক্ষ কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আমিরাতের উপকূলীয় শহর দুবাই। এটি সচরাচর রুক্ষ এলাকা হিসেবে পরিচিত। যদিও এখানে সারা বছরে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়, মাঝেমধ্যেই ভারী বর্ষণও হয়। দুবাই থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল-আইন শহরে ২৪ ঘণ্টায় ২৫৬ মিলিমিটার (১০ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের আবহাওয়াবিদ মার্টিন আম্বাউম বলেন, বিশ্বের এ অংশ সাধারণত দীর্ঘদিন বৃষ্টিহীন থাকে। তবে অনিয়মিত, ভারী বৃষ্টি হয়ে থাকে। এরপরও এটা ছিলো সবচেয়ে বিরল বৃষ্টিপাতের ঘটনা। এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন কতটা ভূমিকা রেখেছিল, এখনই তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
জলবায়ু বিজ্ঞানী অধ্যাপক রিচার্ড অ্যালেন বলেন, বৃষ্টিপাতের তীব্রতা নতুন রেকর্ড গড়েছে। জলবায়ু উষ্ণতার সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে। ঝড় সৃষ্টিতে এবং ভারী বৃষ্টি ঝরাতে আর্দ্রতার পরিমাণ যত বাড়বে, এর সঙ্গে যুক্ত বন্যাও ক্রমশ শক্তিশালী হবে। উষ্ণায়নের প্রভাবে আমিরাতে বৃষ্টি বাড়ার পূর্বাভাস আছে।
স্কাই নিউজের আবহাওয়া সংবাদ বিষয়ক প্রতিনিধি ক্রিস ইংল্যান্ড বলেন, কৃত্রিম বৃষ্টিপাতে নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এত বৃষ্টি হচ্ছে দুবাইয়ে। বিবিসির আবহাওয়াবিদ ম্যাট টেইলর বলেন, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার বিষয়ে আগেই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টায় এক বছরের সমান বৃষ্টির পূর্বাভাষ ছিলো।