কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পোস্ট গ্রাজুয়েট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে এবার পথে নামলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
শুক্রবার বিকেলে কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত একটি পদযাত্রায় অংশ নেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন- রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র, রচনা ব্যানার্জি, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, শতাব্দি রায়, দোলা সেন, বিধায়ক অদিতি মুন্সি প্রমুখ।
পরে এক সংক্ষিপ্ত সভায় মমতা বলেন, শনিবার সব ব্লকে ব্লকে দোষীদের ফাঁসির দাবিতে এবং ‘রাম-বাম’ এর চক্রান্তের বিরুদ্ধে মিছিল করবেন। আমরা চাই সত্য উদঘাটিত হোক। কিন্তু অসত্য ঘটনা নিয়ে কেউ কেউ ভুয়া ভিডিও তৈরি করে অসত্য সংবাদ দিয়ে মানুষের মনকে উত্তেজিত করে দিচ্ছে। সত্যটাকে লুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সব খবর সত্যি নয়। কেউ কেউ পয়সা কামানোর জন্য ডিজিটাল প্লাটফর্মে কনটেন্ট তৈরি করেছে, সেগুলো পলিটিক্যাল পার্টি স্পনসর্ড।
আরজিকরের ঘটনা নিয়ে মমতা বলেন, এটা বাংলার কেউ সমর্থন করে না। আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি দোষীদের শাস্তি হোক এবং এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি যাতে আর কেউ কোনদিন এই কাজ করতে সাহস না পায়। সেটা ফাঁসি হোক। আমরা রাজ্য সরকার ফাঁসির পক্ষে এবং এই তদন্তের অগ্রগতিতে রাজ্য পুলিশ সমস্তভাবে সিবিআইকে সাহায্য করবে।
এসময় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, বিজেপি কী ভাবছে? বাংলাদেশে একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে, এতো ছাত্র মারা গেলো। বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে পারি না আমি, বলিও না। এটা দেশের ব্যাপার দেশ দেখবে। কিন্তু আমরা শুধু ভদ্রতা করবো আর আপনারা ভাববেন আমরা দুর্বল হয়ে গেছি, এটা নয়।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অচল অবস্থার জন্য ঘুরিয়ে মোদী সরকারকেই নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, ‘লজ্জা করে না? মাত্র সাত দিনের মধ্যে পাল্টি খেয়ে গেলেন! প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কেন বলবে যে ভারত যেন আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ না করে। এর আগে কোনো দিনই এমনটা হয়নি। এই প্রথম আপনাদের আমলে... চ্যারিটি বিগেন্স অ্যাট হোম'। আয়নায় আগে নিজেদের মুখ দেখুন।’
এদিকে একই দিন আরজিকরের ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপিও আলাদা করে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদে নামে। অন্যদিকে গোটা রাজ্যে আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া (এসইউসিআই)। যদিও সেই হরতালের তেমন কোনো প্রভাবই পড়েনি।
এদিকে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
গত ৯ আগস্ট এই হাসপাতালেরই পোস্ট গ্রাজুয়েট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়ে অবশেষে ঘটনার তিন দিন পর অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তবে সকালে পদত্যাগের পর বিকেলে তাকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের পদে নিয়োগ দেয় রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। আর তারপর থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও শুরু হয় বিক্ষোভ।
শুক্রবার ডা. সন্দীপ ঘোষকে আটক করে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দপ্তর কলকাতার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখানেই চলছে টানা জিজ্ঞাসাবাদ।
কলকাতা পুলিশ ও গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেইনি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ওই পোস্টগ্র্যাজুয়েট ছাত্রী। দিবাগত রাত দুইটায় বাইরে থেকে খাবার এনে নৈশভোজ সারেন আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে। এরপর তিনি জরুরি বিভাগ ভবনের চারতলার একটি সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ তাঁর নিথর দেহ দেখতে পান হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর বাড়িতে ফোনে খবর দিয়ে জানিয়ে দেয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছুটে আসেন হাসপাতালের জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁরা অর্ধনগ্ন মরদেহ দেখে অভিযোগ করেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। শুরু হয় চিকিৎসকদের আন্দোলন।
চিকিৎসকেরা দাবি তোলেন, ওই চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার নিরপেক্ষ ময়নাতদন্ত, হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোদপুরে বাড়ি ওই ছাত্রীর। মা–বাবার একমাত্র সন্তান ওই চিকিৎসক। তিনি এমবিবিএস পাস করার পর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে চেস্ট মেডিসিন বিভাগে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করছিলেন। ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।