নেপালে শুক্রবার সকাল থেকে চলা ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২ জনে। বহু লোক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের খোঁজে এবং পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গত তিনদিন ধরে অবিরাম বর্ষণে দেশজুড়ে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস হয়েছে এবং শনিবার রাত পর্যন্ত অন্তত ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই দুর্যোগে আরও ৬৮ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ৬৮ জন নিখোঁজ এবং আরও ১০০ জন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
চার মিলিয়ন মানুষের বাসস্থান এবং দেশের রাজধানী কাঠমান্ডু উপত্যকায়ই বেশিরভাগ মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দিল কুমার তামাং। সেখানে বন্যার কারণে যানবাহন চলাচল এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার থেকেই নেপালের বিভিন্ন স্থানে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি বিপজ্জনক সীমায় পৌঁছানোর কারণে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ বিষয়ক কর্তৃপক্ষ।
নেপালের জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হিমালয়ের কোলে অবস্থিত দেশটির অধিকাংশ নদীর পানি উপচে তীরবর্তী এলাকার সড়ক, সেতু ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার সেখানে ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা এবং স্থানীয় উদ্ধারকারী টিমের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ। তারা নিখোঁজ লোকজনকে উদ্ধারে কাজ করছেন।
রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বেশ কিছু নদীর পানি বেড়ে গেছে। ফলে তীর ঘেঁষে থাকা বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ও যানবাহন পানিতে ডুবে গেছে।
হারি মাল্লা নামের ৪৯ বছর বয়সী এক ট্রাকচালক জানান, মধ্যরাতে তিনি যখন বের হন, তখন পানি তার কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তার ট্রাকটিও পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
উদ্ধারকাজে সহায়তা দিতে হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা হেলিকপ্টার ও মোটরচালিত নৌকা দিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন।
ভূমিধসের কারণে বেশ কিছু হাইওয়েতে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে। অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের মুখপাত্র দান বাহাদুর কারকি জানিয়েছেন, কমপক্ষে ২৮টি স্থানে ভূমিধসের কারণে মহাসড়ক অবরুদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছেন তারা। পুলিশ ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করে রাস্তায় যান চলাচলের ব্যবস্থা করছে বলেও জানান তিনি।
কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের মুখপাত্র রিনজি শেরপা বলেছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল অব্যাহত থাকলেও বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ব্যাহত হয়েছে।
রাজধানী কাঠমান্ডুর আবহাওয়াবিদ বিনু মহারজান বলেছেন, সোমবার থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমী বৃষ্টির কারণে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে প্রতি বছর বহু মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরে বন্যা এবং ভূমিধসের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।
এ পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছর বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নেপালে দুইশ’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।