ইরানজুড়ে গত কয়েক ঘণ্টা ধরে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। শুধু তেহরানই নয়, ইরানের বিভিন্ন শহর ও স্থানে শুক্রবার (১৩ জুন) পাঁচ ধাপে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এসব হামলার ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরাইলের এক সামরিক কর্মকর্তার বরাতে টাইমস অব ইসরাইল এবং ব্রিটিশ গণমাধ্যমে বিবিসি বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে এসব তথ্য দিয়েছে।
ইসরাইলের ওই সামরিক কর্মকর্তার দাবি, ইরানজুড়ে শত শত হামলা চালানো হয়েছে এবং কমপক্ষে আটটি স্থানে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। আর বিবিসি বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অপারেশন রাইজিং সান নামে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ইরানের ছয়টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সাথে সম্পর্কিত একটি সংবাদ সংস্থার মতে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজের এক সামরিক বিমানঘাঁটিতে আঘাত করেছে ইসরাইল। বিবিসির যাচাই করা একটি ভিডিওতে ঘাঁটির উপরে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। তবে এনিয়ে তেহরানের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি।
শুক্রবার সকালে ইরানের বৃহৎ আকারের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের প্রধান স্থান নাতানজে আঘাত হানার পর ইসরাইলের দ্বিতীয় দফা হামলা চালানোর খবরও পাওয়া গেছে। নাতানজে কয়েক হাজার সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে এবং ইরানের অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদে এটি একটি প্রধান কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের প্রধান, আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক ব্যক্তিত্ব এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই নতুন হামলা চালায় ইসরাইল।
দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, ইরানের নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্র উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন জানিয়েছেন, রাতভর হামলায় কেন্দ্রটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ডিফ্রিন বলেন, আইডিএফ নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাধন করেছে; যা ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এর আগে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই কেন্দ্রটি ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আইডিএফ আরো বলেন, এই কেন্দ্রটি বিপ্লবী রক্ষীদের তাদের সামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। বহু বছর ধরে ইরানি শাসকগোষ্ঠীর লোকেরা এই কেন্দ্রে পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। কেন্দ্রটিতে সামরিক স্তরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে।
রাতবর ইসরাইল ইরানের উপর বিশাল আক্রমণ শুরু করে, যেখানে ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতা এবং ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানি গণমাধ্যমেও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে, তবে এটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি।
ইরান প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছে, ইসরাইলের জন্য তিক্ত, বেদনাদায়ক পরিণতি অপেক্ষা করছে। প্রতিশোধ হিসেবে তারা এরিমধ্যে ইসরাইলে প্রায় ১০০টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে, তবে এর মধ্যে অনেকগুলোই আকাশেই নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।