মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে যৌথভাবে হামলায় অংশ নিলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইরানিরা কখনও আত্মসমপর্ণ করে না। সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে উত্তপ্ত বাকযুদ্ধের মধ্যেও থেমে নেই ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা। আতঙ্কে তেহরান ও তেলআবিব ছেড়ে পালাচ্ছে বাসিন্দারা।
মধ্যপ্রাচ্যের বাতাসে এখন বারুদের গন্ধ। পাল্টাপাল্টি মিসাইল ও ড্রোন হামলায় কেঁপে উঠছে ইরান-ইসরাইলের বিভিন্ন শহর। সামরিক সংঘাতে ষষ্ঠ দিনেও এসেও থামার কোন লক্ষণ নেই। উল্টো নানা সমীকরণে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সভ্যতা-বিনাশী ধ্বংসের খেলায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর বুধবার জানিয়েছে, পাল্টাপাল্টি হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের দিকে চারশোর বেশি মিসাইল ছুড়েছে তেহরান। পাঠানো হয়েছে কয়েকশ’ ড্রোন। এরমধ্যে তেল আবিব লক্ষ্য করে হাইপারসনিক ফাত্তাহ- ওয়ান মিসাইল ছোঁড়ার কথা জানিয়েছে ইরান।
ইরানের গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরাইলি বাহিনীর একটি এফ-থার্টি ফাইভ যুদ্ধবিমান ইরানের রাজধানীর কাছে ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়া, ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে মেরন বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালিয়েছে তেহরান। এছাড়া ইরানি পুলিশের দাবি, দেশে ভেতরে শত্রুপক্ষের ড্রোন তৈরির কারখানা শনাক্ত করেছে তারা।
বসে নেই ইসরাইলও। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। পাশাপাশি, তেহরানের কাছে খোজির মিসাইল উৎপাদন কেন্দ্রকে নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। শুরুতে রাতের আধারে হামলা হলেও, এখন দিনেও হামলা চালাচ্ছে দেশটি।
ইরানি হামলায় ইসরাইলে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৮০০ জনের বেশি। আর, ইসরাইলি হামলায় ইরানে কমপক্ষে ৫৮৫ জন নিহত নিহত হয়েছে। আহত প্রায় দেড় হাজার। এমন পরিস্থিতিতে তেহরান ও তেল আবিব ছেড়ে হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ স্থানের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন।
দুই পক্ষের মধ্যে থামার কোন যখন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, তখন মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, ইসরাইলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর কথা ভাবছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা এনিয়ে এখন একমত হতে পারেনি।
জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিম কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, হামলায় জড়ালে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে আমেরিকাকে। তিনি আরও বলেন, ইরানের ইতিহাস যারা জানে, তারা ইরানিদের নিয়ে বাজে কথা বলে না। ইরানিরা কখনও আত্মসমর্পণ করে না।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা সতর্কবার্তা দিয়ে বলছেন, যদি ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত নেন, ইরান তা তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বলে বিবেচনা করবে। সেক্ষেত্রে যুদ্ধ পরিস্থিতি পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটি অনিশ্চিত।