ইরান থেকে চালানো একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে উঠেছে ইসরাইলের ভূখণ্ড। এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইহুদি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইরানের হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, ইরান আজ রাতে বড় ভুল করে ফেলেছে। এ জন্য দেশটিকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
হামাসের সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডারদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পরই ইসরাইলে সরাসরি আঘাত হানে ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একসঙ্গে একশরও বেশি মিসাইল ছুড়েছে ইরান।
আলজাজিরা জানিয়েছে, জর্ডানের রাজধানী আম্মানের আকাশ দিয়ে মিসাইল উড়ে যেতে দেখা গেছে। মিসাইলের কারণে জর্ডানেও সাইরেন বেজে উঠেছে। ইসরাইলের নাগরিকদের জীবন বাঁচাতে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়।
বলা হয়, সাইরেন শুনলে অবশ্যই একটি সুরক্ষিত এলাকায় যেতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে। যেসব বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে; সেগুলো হয় মিসাইল আটকানোর কারণে না হয় আঘাত হানার কারণে হচ্ছে।
গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলের ভূমিতে ১৮০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ইসরায়েল সরকার।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অধিকৃত পশ্চিম তীরে একজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মধ্য ইসরায়েলের একটি স্কুল এবং তেল আবিবের একটি রেস্তোরাঁ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
সিএনএন জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি হামলা চালানো হয়েছে নেভাতিম বিমান ঘাঁটিতে। সেখানে কয়েক ডজন মিসাইল ছুড়েছে ইরান। যেগুলো একের পর এক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে দেখা গেছে বলে হামলার ভিডিও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
হামলার পর পরপরই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করেন।
নেতানিয়াহু বলেন, তারা বুঝতে পারবে। আমরা আমাদের নিয়মে থাকবো। যারা আমাদের হামলা করবে, আমরা তাদের হামলা করবো।
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ইরান যুদ্ধবাজ নয়, তবে যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে। আজ রাতের হামলা ইরানের সামর্থ্যের ঝলক মাত্র।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছিলো। লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এরপর লেবাননে স্থল আক্রমণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইরান।
প্রায় এক বছর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের নির্বিচার বোমা হামলায় গাজায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ওই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরুর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নতুন মাত্রা পৌঁছেছে।