দক্ষিণপূর্ব এশিয়াজুড়েই বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তাই, দেশে দেশে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারির পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। এদিকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মিয়ানমারে, ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই অবস্থা ভারত, মালয়েশিয়াসহ আরো বেশ কিছু দেশে।
তীব্র তাপদাহে স্বস্তিতে নেই ভারতের মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলে আগামী পাঁচ দিন তাপমাত্রার খুব একটা হেরফের হবে না। ফলে ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এই বুধবার পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমানে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই নয় গোটা ভারত পুড়ছে তীব্র তাপদাহে। দেশটির কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর- আইএমডি জানিয়েছে, এই বছরের এপ্রিলে ছাড়িয়েছে অনেকগুলো এ মাস স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গরম। মাসের প্রথম ২৬ দিনে ভারতের একটি বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলেছে ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ।
তবে দক্ষিণ উপদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উত্তরের সম ভূমিতে এখনও এই মৌসুমে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। এরইমধ্যে দক্ষিণের রাজ্য কেরালায় হিটস্ট্রোকে দু’জন মারা গেছে। মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড ও কর্নাটকেও দাবদাহ চলছে। জারি রয়েছে সতর্কতা।
আইএমডি জানিয়েছে, ২০২৪ হল এমন একটি বছর যা এল নিনোর সময়ে শুরু হয়েছিলো। এল নিনো একটি আবহাওয়ার ধরণ, নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরে ভূপৃষ্ঠের পানি অস্বাভাবিক উষ্ণতাকে বোঝায়। যা বিশ্বের অনেক অংশে এবং মহাসাগরে চরম উত্তাপের দিকে পরিচালিত করে।
প্রতিবেশী মিয়ানমারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছে এপ্রিলের দাবদাহ। দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় ম্যাগওয়ে এলাকায় তাপমাত্রা উঠেছে ৪৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ৫৬ বছরের মধ্যে এপ্রিল মাসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাণিজ্যিক শহর ইয়াঙ্গুনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি এবং মান্দালয়ে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
ফিলিপাইনে রাজধানী অঞ্চল মেট্রো ম্যানিলাসহ ফিলিপাইন জুড়ে হাজার হাজার স্কুল তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। দেশের ৮২টি প্রদেশের অর্ধেকই খরার সম্মুখীন এবং প্রায় ৩১টি অন্যান্য অঞ্চল শুষ্ক অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। তাপপ্রবাহজনিত শিক্ষার্থীদের অসুস্থতা বেড়েছে।
ভবিষ্যতে অনুরূপ আবহাওয়ার প্রভাবের জন্য দেশকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটির আসন্ন ফসল গড়ের চেয়ে কম হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে এপ্রিল এবং মে উষ্ণতম মাস, তবে এ বছর এল নিনোর কারণে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক এবং মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি রয়েছে। কারণ এরইমধ্যে উত্তরের শহর লাম্পাং-এ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। তাপপ্রবাহ এই সপ্তাহে অব্যাহত থাকবে।
থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এই বছর এখনও পর্যন্ত হিটস্ট্রোকে ৩০ জন মারা গেছে এবং মানুষকে বাইরের কার্যকলাপ এড়াতে সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, বিদ্যুতের চাহিদা ৩৫,৮৩০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, কারণ লোকেরা গরম থেকে বাঁচতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে।
রাজধানী ব্যাংককে, বুধবার তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যখন কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সম্ভাব্য ‘তাপ সূচক’ ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করার বিষয়ে সতর্ক করেছে। আর্দ্রতার মাত্রা বিবেচনা করে এই পরিমাপটি তাপমাত্রা কেমন অনুভূত হয় তা প্রতিফলিত করে।
উত্তর ও মধ্য ভিয়েতনামের বিভিন্ন অংশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছেছে। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ায় কয়েক দিন ধরে ৩৫-৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির অন্তত ১৬টি অঞ্চলের জন্য গরম আবহাওয়ার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।