ষড়ঋতুর চক্রে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখন পাতা ঝরা শীতের আমেজ। উত্তরের হিম বইতে শুরু করলেও পৌষ মাস শুরু হতে এখন কিছু দিন বাকি। তবে সূর্য ডুবতেই ব্যস্ত নগরী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাহারি পিঠার ধোঁয়া জানান দিচ্ছে শীত এলো বলে। রাজধানীজুড়েই এখন গরম পিঠার ম-ম গন্ধ।
গ্রামবাংলার উঠানে পিঠার ধোঁয়া আর সরল আয়োজন হয়তো শহরের ব্যস্ত জীবনে অনুপস্থিত, কিন্তু শহুরে মানুষের শীতকালীন পিঠার প্রতি ভালোবাসা কোনও অংশেই কম নয়। সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার মধ্যেও শহুরে শীতের পিঠা বাঙালির ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে।
ইট-পাথরের ঢাকা শহরে শীতের পিঠা মানেই রাস্তার ধারে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠার ঘ্রাণ বা গরম ভাপা পিঠার সঙ্গে আড্ডা, অফিসফেরত মানুষের জন্য এক আনন্দঘন মুহূর্ত তৈরি করে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সব বয়সের মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে পিঠার দোকানগুলোতে।
রাজধানীর অধিকাংশ মোড় ও ফুটপাথে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। কেউ ভ্যানের ওপর চুলা বসিয়ে, কেউবা রাস্তার পাশে অস্থায়ী পিঠার দোকান বসিয়েছেন। পিঠার মধ্যে চিতই, ভাপা, পুলি, ছিটা পিঠার চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। আর দামও সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে।
বেশিরভাগ দোকানেই একাধিক স্বাদের ভর্তা দিয়ে সবচেয়ে বেশি চলে চিতই পিঠা। সরিষা, ধনিয়া পাতা আর শুটকির ভর্তায় রসনার স্বাদ নিতে ব্যস্ত ভোজন রসিকরা। গুড় নারিকেল আর চালের আটা দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠারও আবেদন কম নয়। দোকানে বসে খাওয়ার পাশাপাশি অনেকে বাসায়ও নিয়ে যাচ্ছেন।
নগরীর বেশিরভাগ জায়গায় চিতই পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি করেন দোকানিরা। সঙ্গে থাকছে নানা ধরনের ভর্তা। এর জন্য আলাদা কোনো টাকা দিতে হয় না। এছাড়া স্পেশাল ডিম চিতই পিঠা ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। ভাপা পিঠা বিক্রি হয় ১০ টাকায়। তবে স্পেশাল ভাপা পিঠা ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে অনেক জায়গায়।
শীতের পিঠাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ফুটপাথগুলো এখন জমজমাট। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে ও বিভিন্ন সড়কে ভ্যানে চুলা বসিয়ে কিংবা অস্থায়ী দোকান বসিয়েও বিক্রি হচ্ছে শীতের পিঠা। এই সময়ে পিঠা বিক্রি করতে মৌসুমি বিক্রেতাদেরও আগমন ঘটেছে এই শহরে।
অন্যান্যবারের তুলনায় এবার শীতকালীণ পিঠার দাম একটু বেশি বলেই অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, পাঁচ টাকায় কোনো পিঠা এখন আর নেই। যে পিঠা কয়েক বছর আগে দুই টাকা দামে খেয়েছেন, সেই পিঠার দাম এখন দশ টাকা। তবে তারপরও পিঠা উৎসবে মেতে উঠার অপেক্ষায় নগরবাসী।