রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের পাশের রিং রোডে গেলেই চোখে পড়বে ‘নাফিজ ফুড কর্নার’। অন্য আর দশটি ফুড কার্টের মতো হলেও, এটির রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। এই খাবারের দোকানটি পরিচালনা করছেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাফিজ আজাদ পৃথিবী।
নবম শ্রেণির ছাত্র তিনি। কতোই বা বয়স? যে বয়সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে, গেম খেলে কিংবা নিছকই পড়াশোনা নিয়ে সময় কাটানোর কথা, সে বয়সেই নাফিজ শুরু করেছে তার নিজের ব্যবসা। কেন হঠাৎ করে পড়াশুনার পাশাপাশি এমন উদ্যোক্তা হবার শখ হলো তার, এমন প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিলেন নাফিজ।
নাফিজের মা পেশায় একজন ব্যাংকার, বাবা সফল ব্যবসায়ী, বড় ভাই পড়াশোনা করছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। আর নাফিজ হাঁটছেন এখন অন্যপথে। ছোটবেলা থেকে লালিত স্বপ্ন পূরণে ১৮ সেপ্টেম্বর একটি ভ্যানে অল্প কিছু খাবার আর একটি চুলা নিয়ে শুরু করে দেন খাবারের ব্যবসা।
স্কুল ছাত্রের এমন প্রচেষ্টা বৃথা হতে দেয়নি আশপাশের মানুষ ও ভোজনরসিকরা। সফলতা পেয়ে এক সপ্তাহ পরেই নিজস্ব ফুড কার্টেই খাবার বিক্রি শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে সব কিছুর পেছনে ছিলেন নাফিজে মা। বললেন, আসল কারিগর তার ব্যাংকার মা।
স্কুলের ক্লাস শেষ করে এসে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফুডকার্টটি চালু রাখেন নাফিজ। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি জানে, শিক্ষার্থীরা চাইলেই বেশি দামে খাবার খেতে পারে না। তাই, নাফিজ ফুড কর্নারে সব খাবার পাওয়া যাচ্ছে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে।
স্কুলছাত্র নাফিজের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন সবাই। উৎসাহ দিতে আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে নাফিজ ফুড কর্নারে খেতে আসছেন সহপাঠী, বন্ধু, এমনকি শিক্ষকরা। সবার মুখেই নাফিজের প্রশংসা। তারা বলছেন, নাফিজের এমন উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মকে নতুন করে ভাবাতে শেখাবে।
নাফিজের দোকানে তাকে সাহায্য করেন দু’জন শিক্ষার্থী। ফুড কার্টটি দিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। যার বেশিরভাগ দিয়েছে মা-বাবা। এটি পরিচালনাতে সাহায্য করেন মা। এছাড়া একজন কর্মচারীও রাখা হয়েছে। খাবারে গুণগত মান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে নাফিজ।