স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরি এমপির সাথে তার সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে বাংলাদেশ সফররত জার্মান পার্লামেন্টারি ডেলিগেসনের সদস্য রিনেট কুনাস্ট, আন্দ্রিয়াস লারেম, পল লারিডার, রিয়া স্রডার, আন্দ্রে হান ও মাল্টে কৌফমান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সাক্ষাৎকালে তারা বাংলাদেশ-জার্মানি সুদীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন, জলবায়ু অভিযোজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন, বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে জার্মানির বিনিয়োগ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এসময় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৩ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বাঙালি জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, যে কারণে আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে জার্মানি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে দুইদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিগত পঞ্চাশ বছরে আজ অনন্য উচ্চতায়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের পাশাপাশি শতভাগ বিদ্যুতায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আনয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব বিবেচনায় টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন, ২০০৮ সালে নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ এবং জলবায়ু অভিযোজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সরকারের মূল লক্ষ্য। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে জার্মানির অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন স্পীকার।
রিনেট কুনাস্ট এমপি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব বিবেচনায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ দেশ। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বহি:প্রকাশ। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা স্থিতিশীল রয়েছে যা প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রশংসা করে রিয়া স্রডার এমপি বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ সকলেরই দায়িত্ব।
স্পীকার বলেন, পোশাক শিল্পখাতসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিবহণ সুবিধা প্রদান, ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন ইত্যাদি নানামুখী পদক্ষেপ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ আনয়নে সরকার সদা সচেষ্ট৷ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সকল পর্যায়ে আজ নারীদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান। নারীশিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতির পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম চলমান।
পোশাকশিল্পখাতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে পল লারিডার আগ্রহ প্রকাশ করলে স্পীকার বলেন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ইত্যাদি সংগঠনের সাথে সর্বদা আলোচনার মাধ্যমে সরকার পোশাকশিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা অনেক বেশি। পাশাপাশি পোশাকশিল্প কারখানাগুলোর কমপ্লায়েন্স অনুসরণ নিশ্চিত করেছে সরকার।
আন্দ্রিয়াস লারেম এমপি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর প্রভাব পরেছে।
আরও পড়ুন: দিনে অপরিবর্তিত থাকলেও কমতে পারে রাতের তাপমাত্রা
স্পীকার বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি, বৈশ্বিক ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি হিমশিম খেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক কাঠামোর উত্তরণের প্রশংসা করেন জার্মানির সংসদীয় প্রতিনিধিদল। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষার্থে তাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে জার্মানির সহযোগিতা কামনা করেন স্পীকার।
এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আসিম ট্রস্টার, দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ ও সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তর/আরএ