সেকশন

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
 

শিক্ষার্থীদের জার্মান যেতে লাগতে পারে ৪০ বছর, বিকল্প খোঁজার পরামর্শ

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১২ পিএম

পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে যেতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সামনে এসময় ৪০ বছরও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার। পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ জায়গা থেকে বিকল্প খোঁজারও পরামর্শ দিয়েছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা পেতে দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে একাত্তরের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। আখিম ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি জানিয়েছেন, জার্মানি বাংলাদেশের মেধাবী ও আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানায়। তবে ভিসা আবেদনের চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার সময় বাড়ছেই। এ বিষয়ে জার্মান তাদের সক্ষমতা বাড়লেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় তা কম বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাস

ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের সূত্র বলছে, ২০২৪ সালে জার্মান অ্যাম্বাসি ঢাকায় রেকর্ড সংখ্যক স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু করেছে। সংখ্যাটা ছিলো এক হাজার ৭২৩। অন্যদিকে ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো মাত্র ৮৫৩টি। এর মানে গত ছয় বছরে শিক্ষার্থী ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে জার্মানি।

শুধু স্টুডেন্ট ভিসাই না, পরিবার পুনর্মিলন ভিসার ক্ষেত্রেও অ্যাম্বাসি তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। কিন্তু এই ক্যাটাগরির ভিসাতেও বেড়েছে অপেক্ষার সময়। ২০১৮ সালের ৪১৫টি পরিবার পুনর্মিলন ভিসা দেয়া হয়েছে। সেখানে ২০২৪ সালে পরিবার পুনর্মিলন ক্যাটাগরিতে ভিসা পেয়েছেন ৮৯৪ জন।

আখিম ট্র্যোস্টার জানিয়েছেন, উচ্চ চাহিদা মোকাবিলা এবং শিক্ষার্থীদের গতিশীলতা নিশ্চিত করতে গত কয়েক বছরে অ্যাম্বাসি ভিসা বিভাগের প্রসেসিং সক্ষমতা বাড়ানোর বেশ কিছু ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে। স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বার্লিন থেকে অস্থায়ী কর্মীদের আনা হচ্ছে সহায়তার জন্য।

জার্মানির ১৬টি প্রদেশের মধ্যে ১৪টিতে শিক্ষার্থীদের কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না। প্রতি ছয় মাস অন্তর গড়ে ২০০ থেকে ৪০০ ইউরো সেমিস্টার ফি দিতে হয়, যার মধ্যে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে রাজ্যে অবস্থিত, সেখানকার সব গণপরিবহনের ভাড়াও অন্তর্ভুক্ত থাকে।

তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রকৌশল বিদ্যার বিষয়গুলোর পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়, প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের জন্যও রয়েছে পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ।

বাংলাদেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী জার্মানিতে যায়, তাদের মধ্যে অনেকের স্কলারশিপ, অর্থাৎ বৃত্তি থাকে। আর যারা বৃত্তি ছাড়া আসেন, তাদের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

খণ্ডকালীন কাজের জন্য জার্মান ভাষা জানার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ইংরেজি ভাষা জেনেও করার মতো কাজ রয়েছে। তবে ভাষা জানা থাকলে প্রতিদিনের জীবনযাত্রা কিছুটা সহজ হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের অধ্যয়নের বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে পারে।

এছাড়া পড়ালেখা শেষে গবেষণা ও পূর্ণকালীন কাজ করার সুযোগ, জীবনযাত্রার উচ্চমানসহ আরও বিভিন্ন সুযোগের কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের তালিকার শুরুতেই থাকে জার্মানির নাম।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

তবে তাদের অভিযোগ, ভিসা পেতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে একাডেমিক ও আর্থিক সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। শিক্ষার্থীদের দাবি, বাংলাদেশে সরকারের দ্রুত এ বিষয়ে জার্মান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধান করা উচিত।

কথা হয় কাজী শাফায়েত করিম নামের এক স্নাতক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে জার্মানির অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন। সামনে কবে ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পাবেন জানেন না। যখন তিনি অ্যাপয়নমেন্ট নেন, তখন তাকে জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ১৫ মাস।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শাফায়েত বলেন, আর্থিক ও মানসিক দুই ধরণের চাপই অনুভব করছি। জার্মানিতে না গিয়েও এখন পর্যন্ত ‘সেমিস্টার কন্ট্রিবিউশান ফি’ বাবদ ৯০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি জার্মানির যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি সেখানে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকেই। এক সেমিস্টার শেষ হয়ে গেছে। আমি যেতে পারলাম না। পড়াশোনার ব্যবধান (স্টাডি গ্যাপ) তৈরি হচ্ছে। এ নিয়েও অ্যাম্বাসি সমস্যা করে। বাংলাদেশ সরকারের জার্মানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা উচিত।

জার্মানিতে স্নাতকোত্তর পড়তে যেতে চান আরিফুর রহমান। তিনি দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। জানান, দীর্ঘ অপেক্ষার সময়ের কারণে তারা কেউ সঠিক সময়ে জার্মানিতে পৌঁছতে পারছেন না।

হাসিন মাহতাব, বাংলাদেশের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর করে অপেক্ষা করছেন জার্মান যাত্রার। তিনি জার্মানিতে মাস্টার্সে পড়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু বাকিদের মতো তাকেও পড়তে হয়েছে লম্বা অপেক্ষার সময়ের গ্যাঁড়াকলে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুই বছরের মাস্টার্স করতে যেতে অপেক্ষাই করতে হচ্ছে দুই বছরের বেশি। এখন যারা ভিসা পাচ্ছেন, তাদের সবার কম-বেশি ২৬ থেকে ২৭ মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

তিনি শিক্ষার্থীদের এ ধরনের হয়রানি বন্ধের জোর দাবি জানান। এছাড়া বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।

শাফায়েত, মাহতাবের মতো একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, হাসনাত, শাকিল, মাধুর্য কর্মকারসহ একাধিক শিক্ষার্থী। সবারই প্রত্যাশা দ্রুত কোন সমাধান আসুক।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

একাত্তর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একাধিকবার ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলমান ভিসা সমস্যার আশু সমাধানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আমাদের জানিয়েছেন, সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান ভিসা আবেদন সংখ্যার অনুপাতে দূতাবাসে আবেদন প্রক্রিয়াকারী জনবলের সংকট রয়েছে। এটিই উদ্ভূত ভিসা দীর্ঘসূত্রিতার মূল কারণ। তবে তারা সমস্যাটির সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন।’ 

সূত্র বলছে, ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৮১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন অপেক্ষমাণ তালিকায়। যা নিয়মিত বেড়েই চলছে। অন্যদিকে জার্মান দূতাবাসের বার্ষিক সক্ষমতা মাত্র দুই হাজারের আশপাশে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, করোনা পরবর্তী সময়ে অপেক্ষার সময়কাল (ওয়েটিং পিরিয়ড) ছিলো ১২ মাস থেকে ১৫ মাস, তারপর ১৫ মাস থেকে ১৯ মাস করা হয়। পরে ২৪ মাস করা হলেও বর্তমানে অফিসিয়ালি কোনো অপেক্ষার সময়কাল উল্লেখ করা হচ্ছে না। দূতাবাস নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারাও জানে না অপেক্ষার সময়কাল কতদিন হবে।

সত্যতা যাচাই করতে জার্মান দূতাবাস বাংলাদেশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বলা হয়েছে, ‘আমাদের অপেক্ষমাণ তালিকায় নিবন্ধনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায়, আপনার জন্য অপেক্ষার নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে আমরা কোনো ধারণা দিতে পারছি না। অনুগ্রহ করে ধৈর্য ধরুন এবং প্রক্রিয়ার জন্য যথাযথভাবে অপেক্ষা করুন।’

এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার একাত্তরকে বলেন, ‘২০২৪ সাল থেকে জার্মান দূতাবাস বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন জমা দেয়ার প্রক্রিয়া আমাদের বহিরাগত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভিএফএস ঢাকাকে আউটসোর্স করেছে। যদিও প্রতিটি ভিসা আবেদনের সিদ্ধান্ত এখনও অ্যাম্বাসির দ্বারাই নেয়া হয়, তবে ভিএফএস অ্যাম্বাসির কাজের চাপ কমিয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে আরও বেশি আবেদন প্রসেসিং সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া জার্মানির বাসস্থান আইনে পরিবর্তন এসেছে, যা শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন প্রসেসিংয়ের সময় জার্মানির স্থানীয় অভিবাসন অফিসের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা কমিয়েছে। এটি আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে এবং আগের তুলনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের সংখ্যাকে অ্যাম্বাসির প্রসেসিং সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য আরও ব্যবস্থা নেয়া নিয়ে আলোচনা করছি, যাতে দীর্ঘ অপেক্ষার সময় এড়ানো যায় এবং শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক পরিকল্পনার জন্য সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের কথা সূত্র ধরে জার্মানির বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েক জনের কাছে তাদের বাংলাদেশের অপেক্ষার সময় কমানো নিয়ে পরিকল্পনা কী তা জানতে চায় একাত্তর। তবে সংশ্লিষ্ট কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জার্মানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে কিনা তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে অবগত রয়েছে বলে জানানো হয়। 

বলা হয়, ‘জার্মানিতে গমনেচ্ছু আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাসে এ ধরণের অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকেও এ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য নিয়মিত অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

করোনার সময় বাংলাদেশ, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের জার্মানির ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হতো। পরে পাকিস্তান ও জার্মান সরকার মিলে সে দেশের সমস্যা যেমন সমাধান করেছে, ভারতেও তাই। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকিস্তানে জার্মানির দুটি দূতাবাস রয়েছে। একটি ইসলামাবাদ অন্যটি করাচিতে। এর মধ্যে ইসলামাবাদে অবস্থিত দূতাবাসটি প্রধান দূতাবাস হিসেবে কাজ করে।

অন্যদিকে ভারতে আছে জার্মানির চারটি দূতাবাস। রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত প্রধান দূতাবাস। এর বাইরে মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতা থেকে জার্মান ভিসা সেবা এবং অন্য কনস্যুলার সেবা দেওয়া হয়।

পাকিস্তানের ইসলামাবাদের জার্মান দূতাবাসের তথ্য বলছে, স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করার পুরনো পদ্ধতি বন্ধ হয়ে গেছে। ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে, যেখানে আবেদনকারীদের কনস্যুলার সার্ভিস পোর্টাল ব্যবহার করে আবেদন করতে হচ্ছে।

করাচিতেও সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার সুযোগ নেই, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করলে সুবিধাজনক সময় মেলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট।

ভারতের নয়াদিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতা সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয় না। আবেদন করতে হয় ভিসা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে।

জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মতো একই ধরণের ভোগান্তিতে পড়েছিলেন পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা। তবে, এখন সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে দেশটি। প্রতিবেদন তথ্যমতে, ২০২২ সালের পর থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের পর ১২ মাস বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছিলো দেশটির শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

একাত্তর পাকিস্তানি বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলো। এর মধ্যে কয়েকজন লম্বা অপেক্ষার সময় ভিন্ন দেশ থেকে জার্মানিতে পাড়ি দেয়ার কথা জানান। তবে, জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা ভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীদের জার্মানিতে আসতে নিরুৎসাহিত করে।

জার্মানিতে অধ্যায়নরত পাকিস্তানের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উসাইদ মাহমুদ একাত্তরকে বলেন, ভিসা বিলম্বের সমস্যাটা সত্যিই খুব কঠিন ছিলো। আমার প্রোগ্রামের ডেডলাইন চলে যাচ্ছিলো, এনরোলমেন্ট পিছিয়ে যাচ্ছিলো। আমি মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম। শুধু ভাবতাম সময়মতো জার্মানিতে পৌঁছতে পারবো কিনা। আর্থিক চাপও ছিলো বিশাল।

তিনি বলেন, আমার মতো অনেক বন্ধুই ফি পরিশোধ করা, ফ্লাইট বুক করা ছিলো। কিন্তু আমরা আটকে পড়েছিলাম। পুরো সময়টা আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায় পার করেছি।

পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকে জার্মানিতে পড়াশোনা করতে এসেছেন সৈয়দ হোসেন নাকি। তার কাছে একাত্তর জানতে চেয়েছিলো, পাকিস্তানের সরকার কীভাবে তাদের সহায়তা করেছিলো।

ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাস

তিনি এর জবাবে বলেন, অনেকভাবে চেষ্টা করার পর আমাদের সরকার শেষমেশ এগিয়ে আসে। পাকিস্তান সরকার নানাভাবে জার্মান দূতাবাসের ওপর চাপ দেয়। শেষে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। আমরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলাম। টুইটার (বর্তমান এক্স), ফেসবুকের মতো বিভিন্ন প্লাটফর্মে আমরা আমাদের বাজে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতাম।

সৈয়দ হোসেন বলেন, শেষ পর্যন্ত জার্মান সরকার উদ্যোগ নেয় এবং তাদের লোকবল বাড়ায়। এখন প্রক্রিয়াটা আগের চেয়ে অনেক সহজ।

পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারও একই ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে বলে উল্লেখ করেন। বলেন, সরকারি পর্যায়ে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হলে দ্রুত সমাধান হতে পারে।

পাকিস্তান সরকারের মতো করে বাংলাদেশ সরকারও কেন উদ্যোগ নিচ্ছে না এ বিষয়ে জানাতে চাইলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একাত্তরকে বলা হয়, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, কোভিড মহামারীর সময় দিল্লি ও ইসলামাবাদস্থ জার্মান দূতাবাস একই ধরণের ভিসা প্রসেসিংয়ের সমস্যায় পড়েছিল। বিশেষ করে, অনেক দিন ভিসা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এক সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন জমা পড়েছিলো। তাই আমরা ওই দেশগুলোতে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসসমূহকে জানতে বলেছি যে, সেসময় জার্মান দূতাবাস কীভাবে এই ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলো। একই সঙ্গে আমরা জার্মানির বার্লিনে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসকেও জার্মান সরকারের কাছে চলমান সমস্যার সমাধানের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি।’

বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কীভাবে কাজ করছে তা জানতে চেয়ে একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে একাত্তর। কিন্তু কেউই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।

বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাস

লম্বা এই অপেক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের করণীয় কী, বা পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হতে পারে, সবশেষ এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার একাত্তরকে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, বেশিরভাগ আবেদনকারী দীর্ঘ অপেক্ষার পরই ভিসা পায়। নতুন ব্যবস্থা চালু করার পরও, দূতাবাসের বার্ষিক প্রসেসিং সক্ষমতা (বর্তমানে আনুমানিক ২০০০) এর তুলনায় আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকবে বলে মনে হয়। তাই দীর্ঘদিন অপেক্ষার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক শিক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগতভাবে বিকল্প বিবেচনা করতে পারে।’

দ্র. প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন জার্মানিতে অবস্থান করা কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

 

 

এপ্রিলের গরম আর হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিতে আবারও বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ। কীটতত্ববিদরা বলছেন, গরম ও হালকা বৃষ্টির পরিবেশ এডিস মশাদের বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ স্লোগানে ১৪৩২ বাংলা বছর বরণ করে নিতে প্রস্তুতি চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। চারুকলা অনুষদ কর্তৃপক্ষ বলছে, চব্বিশের চেতনা ধারণ করেই এবারের আয়োজন...
পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র; এই তিন প্রতিষ্ঠান সচেতনভাবে কাজ করলেই কেবল নারীর প্রতি সহিংসতা নিপীড়ন ও ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ যে স্বাধীনভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি চর্চা শুরু করেছে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর সেটির বড় উদাহরণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও এ পরিস্থিতিতে 'যে কোনো পদক্ষেপের জন্য' মোদী সরকারের প্রতি পূর্ণ...
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যে কোনো মূল্যে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী মুক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা হয়েছে। তবে পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে সফরের নতুন তারিখ চূড়ান্ত করা হবে বলে...
লোডিং...
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত