দেশের আগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আসন্ন নির্বাচনে নারী সমাজকে ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বাবা বলতেন, নারীদের অধিকার অধিকার বলে চিল্লালে হবে না। অধিকার হবে তখনই, যখন নারী ১০ টাকা নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করতে পারলেই মেয়েদের কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।
রবীন্দ্রানাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুলের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীরা শুধু মাথা খুটে বললে হবে না, আমাদের অধিকার দাও। নিজের অধিকার নিজেকে অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। তিনি এ দেশে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানে কিন্তু নারীর সমঅধিকারের কথা বলা আছে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে, তার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নবনির্মিত ‘জয়িতা টাওয়ার’ উদ্বোধন উপলক্ষে গণভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১০টার পর তিনি জয়িতা টাওয়ারের উদ্বোধন করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।
নারীদের আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে এই উন্নয়ন করতে পেরেছি। নারীদেরসহ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা জয়িতা ফাউন্ডেশন করেছি। নারীদের উৎপাদিত পণ্য পদর্শনীর জন্য এই টাওয়ার করেছি। গণভবনের মাটি আজ ধন্য, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দক্ষ ও সফল নারী উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মেয়েরা প্রশাসন থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে যাবে। নারীদের ওসি, এসপি করেছি, বিচারকও বানিয়েছি। এসপি পদায়নের সময় অনেকে এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। কিন্তু আমি তা শুনিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, আপনারা জানেন, প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন একজন নারী। তিনি নবীকে বিয়ে করেন এবং তার সম্পদ দিয়ে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সহযোগিতা করেন। সেসময় যখন একজন নারী এভাবে ব্যবসা করেছেন, স্বামীকে সহযোগিতা করেছেন। তাহলে এখন নারী ঘরবন্দি হবে কেন? হ্যাঁ, শালীনতার সঙ্গে সব যায়গা চলবে।
যখন রাজপথে পুরুষরা নামতে পারেনি, আমাদের নারী নেত্রীরা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন। আমাদের আইভি রহমানসহ আমাদের অসংখ্য নারী নেত্রী জীবনও দিয়েছেন। আমি তাদের স্মরণ করছিল- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা মানুষকে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। বার বার কারাবরণ করেছেন। তিনিই আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার ডাকেই এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। তিনিই এদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতির শুরুটা করে দিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধের দামাম বাজছে। একদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। অপরদিকে, ইসরাইল-প্যালেস্টাইন হামলা চলছে। প্যালেস্টাইনের অর্ধেকের বেশি জায়গা ইসরাইল দখল করে ফেলেছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী বা রাজনীতিক হিসেবে না, একজন মা হিসেবে বিশ্বনেতাদের বলবো- আপনারা বন্ধ করেন এই যুদ্ধ, বন্ধ করেন এই অস্ত্রের প্রতিযোগিতা। কারণ যুদ্ধ হলে বেশি বেকায়দায় পড়ে আমাদের বোনেরা ও শিশুরা। আমাদের সেই অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৭১ সালে আমরা সেটা দেখেছি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রভাব ও যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। দ্রব্যমূলের দাম বেড়ে গেছে। জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে। তাই যার যেখানে সুযোগ আছে, নিজেরা যেন চাষ করি। নিজেরা আবাদ করলে নিজের চাহিদা পূরণ করতে পারবো। নিজেদের উপার্জন নিজে করবো, নিজের পায়ে দাঁড়াবো। পরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে নয়, কাজের মধ্য দিয়ে অধিকারটা অর্জন করবো। আমাদের প্রতিটি জায়ঘায় নারীদের আসন ও পদ সংরক্ষিত আছে, রেখেছি।
সরকারপ্রধান বলেন, জেন্ডার ইকুয়েলিটির কথা বলে অনেক দেশ। আমাদের দেশে উল্টো হয়ে গেছে। আমার দেশে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি স্কুলে যায়। মেয়েরা ফলাফলেও ভালো করে। খেলাধুলায়ও নারীরা ভালো করছে। প্রাইমারি ও মাধ্যমিকে খেলাধুলা চলছে, এখানে মেয়েরা যাতে আরও সম্পৃক্ত হয় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি মেহের আফরোজ। সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা।
দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জয়িতা ব্র্যান্ডের আওতায় নানামুখী ব্যবসা উদ্যোগে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক ভৌত অবকাঠামো সুবিধা সংবলিত জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। জয়িতা টাওয়ারে ইউনিভার্সেল এক্সেসিবিলিটিসহ দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন ধরনের পণ্য, সাপ্লাই চেইন ও সেবা বিপণনের সুবিধা থাকবে। এ ভবনে নারী উদ্যোক্তাদের জ্ঞান, দক্ষতা, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ও বিকাশ কৌশল ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা রাখা হয়েছে। এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং সুবিধা ও সুপরিসর লবি।
এছাড়া ভবনটিতে থাকবে জয়িতা ফাউন্ডেশনের সদর দপ্তর। জয়িতা আইকনিক টাওয়ারে রয়েছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, ডিজাইন সেন্টার, বিউটি পার্লার, নারীদের জন্য জিমনেসিয়াম, নারী ও শিশুদের জন্য সুইমিং পুল, মাল্টিপারপাস হল, সেমিনার হল, ব্যাংক, ফুডকোর্ট ও ক্যাফে। চালু করা হয়েছে ই-জয়িতা অনলাইন মার্কেট প্লেস।