প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শপথ নেবেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আর নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে গত তিন দশকের মধ্যে সব থেকে ছোট মন্ত্রিসভা গঠন করা হচ্ছে।
নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকছেন ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছেন ১৪ জন। এর আগে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এমন পাঁচজনকে আবার মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে নতুন মন্ত্রিসভার সব চেয়ে বড় চমক হিসেবে দেখা গেছে বাদ পড়াদের তালিকায়। বিদায়ী মন্ত্রিসভার ৩০ জন সদস্য জায়গা পাননি নতুন মন্ত্রিসভায়। এদের মধ্যে গত রোববারের ভোটের আগেই বাদ পড়েন দুজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী।
বাদ পড়া একজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় ফিরেছেন। তিনজন নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, তিনজন দলীয় মনোনয়নই পাননি।
অর্থ, বাণিজ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চারজন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর কেউই নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। বাদ পড়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। বাদের তালিকায় আছেন স্বাস্থ্য, কৃষি, ভূমি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীও।
গত বছর জুড়েই আলোচনায় ছিলো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন সংস্থার অভিযান ও উদ্যোগেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।
এদিকে আর্থিক খাতও ছিলো আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে। এই খাতের বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় এসেছে বারবার।
ভোটের আগে আওয়ামী লগের নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেসবের মধ্যে অন্যতম ছিলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো।
এই দুই খাত সংশ্লিষ্ট পুরোনো সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে নতুন তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে।
বাদ পড়াদের মধ্যে রয়েছেন- অর্থমন্ত্রী আ হম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
আর টেকনোক্র্যাট কোটার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ভোটের আগেই পদত্যাগ করেছেন।
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা ছিলো বছর জুড়েই। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয় নিয়ে আলোচনা গড়িয়েছে একেবারে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত।
এরি মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে নতুনভাবে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।
২০১৪ সাল থেকে পাঁচ বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো পেশাদার কূটনীতিক এএইচ মাহমুদ আলীকে আবার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভায়। তবে তাকে কোন দায়িত্ব দেয়া হবে এবং তার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী কেউ থাকবেন কিনা তা এখনো পরিষ্কার না।
মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিশ্বব্যাপি মহামারির ধাক্কা এসে পড়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সামনে। তবে সেই ধাক্কা সামলাতে গিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। তারপরও বাংলাদেশ মহামারির ধকল কাটিয়ে ওঠে।
তবে নানা সময় বেফাঁস মন্তব্য ও কথাবার্তা বলে আলোচনায় জড়িয়ে পড়া জাহিদ মালেক নতুন মন্ত্রিসভায় ঢুকতে পারেননি।
বিভিন্ন আলোচনার জন্ম দেওয়া ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে নতুন তালিকা থেকে।
এর আগে মতিয়া চৌধুরী কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার সময় বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছিলো। তখন খাদ্য রপ্তানির কথাও আলোচনায় ছিলো।
হঠাৎ করেই যেন পরিস্থিতি উল্টে যায়। পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে যায়। আবার আমদানির ক্ষেত্রে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাটানি চোখে পড়ে।
খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও ভোগের সঠিক পরিসংখ্যানের অভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনবার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো মতিয়া চৌধুরীর পর ২০১৯ সালে কৃষিমন্ত্রী হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক। নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাকে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে উঠেছে নানা অভিযোগ। তার নিজের ছেলে ও স্বজনদের বিরুদ্ধে বনের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঠিকাদারি কাজ নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা হারিয়েছেন তিনি।
আলোচিত মন্ত্রীদের মধ্যে আরো বাদ পড়েছেন: রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন: শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে এদের শপথ।