এক দফার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় সারাদেশে ৭৯ জন নিহত হওয়া খবর পাওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা আরও অনেক।
এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ জেলায় ২২ জন, লক্ষ্মীপুরে ১১জন, ফেনীতে আট জন, নরসিংদীতে ছয় জন, মাগুরায় চার জন, রংপুরে চার জন, মুন্সীগঞ্জে তিন জন, বগুড়ায় তিন জন, শেরপুরে তিন জন, কিশোরগঞ্জে তিন জন, পাবনায় তিন জন, কুমিল্লায় তিন জন, সিলেটে দুই জন, ঢাকায় দুই জন, জয়পুরহাটে এক জন ও বরিশালে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
সহিংসতায় আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মধ্যে একাত্তর টিভির তিন সাংবাদিকসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে নিহতের এই সংখ্যা জানানো হয়েছে।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক বলেন, আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এসে এনায়েতপুর থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা থানায় আগুন দেয় এবং সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে হত্যা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারী থানার দক্ষিণে জমায়েত হয়। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ছিলেন।
জমায়েত থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা থানার দিকে যান। থানার সামনে আসার পর পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাখানেক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোঁড়ে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা থানার ভেতরে ঢুকে পড়ে আগুন দেয়। এরপর পুলিশ সদস্যদের ধরে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে।
এর বাইরে জেলার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী এবং বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সংঘাতে আরও ৯ জন মারা গেছেন।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের এমপি চয়ন ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সহ-সভাপতি বিমল কুমার দাসের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের ছয় নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। রোববার দুপুরে মাধবদী পৌরসভার বড় মসজিদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। নিহতের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যান রয়েছে।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন শাহীন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮)।
নরসিংদী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিকলীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন (৩৮) এবং আওয়ামীলীগ কর্মী গোলাপ (৪০)।
রোববার সকালে রংপুর টাউন হলে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন পায়রা চত্বর ও জাহাজ কোম্পানির মোড়ে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় । এতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খসরু মিয়াসহ আরও দুইজন মারা যান ।
মাগুরাতেও আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বি, দুই শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন ও সুমন শেখ। আরও একজন নিহত হয়েছেন, তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা সড়কে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই নির্মাণ শ্রমিকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়।
মানিকগঞ্জ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের খবর সংগ্রহে গিয়ে আহত হয়েছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের মানিকগঞ্জের রিপোর্টার মনজুর রহমান এবং এটিএন বাংলার শহিদুল ইসলাম সুজনসহ বেশ কয়েকজন ।
সিলেট ও পটুয়াখালীতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন, একাত্তর টিভির দুই সাংবাদিক হোসাইন আহমেদ সুজাত ও আহসানুল কবির রিপন।
বেলা এগারোটা থেকে খুলনার শহরজুড়ে তাণ্ডব শুরু করে আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা হাদিস পার্কের সামনে আওয়ামী লীগ অফিসে ও শেরে বাংলা রোডে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এরপর তারা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়।
ঝালকাঠিতে শহরের ফায়ার সার্ভিস সড়কে আন্দালনকারীদের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে।
জামালপুরেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এ সময় দুটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়।
কুড়িগ্রামে আন্দোলনকারী,পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. জাফর আলী ও সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম রতনসহ উভয়পক্ষের ৩০জন আহত হয়েছেন।