পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র; এই তিন প্রতিষ্ঠান সচেতনভাবে কাজ করলেই কেবল নারীর প্রতি সহিংসতা নিপীড়ন ও ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, পরিবারে নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতায় জড়িত পুরুষদের সচেতন করা গেলে নারী নির্যাতন কমানো সম্ভব নয়।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং নৃবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারী সহিংসতা প্রতিরোধে ছোটবেলা থেকেই পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবক্ষেত্রেই ছেলে শিশুদের সচেতন করার কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি সম্মানবোধ ছোটবেলা থেকে না শিখলে, বড় হয়ে গেলে শেখানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা।
কিছু দিন আগেই রাজধানীর বনশ্রীতে নিজ বাসার সামনে হেনস্তা ও নির্যাতনের শিকার হন রাফিয়া তামান্না নামে এক নারী সাংবাদিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হবার পর পর গ্রেপ্তার হয় তিন তরুণ। অথচ, এই তরুণদের একজনের পরিবার বিষয়টি জানার পরও নির্লিপ্ত ছিলো। আর এভাবেই অপরাধীর পরিবারও হয়ে ওঠে নারী নির্যাতনের সহায়ক।
এই প্রসঙ্গে টেনে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহানা পারভীন প্রশ্ন রাখেন, কেনো এই তরুণরা নারীর প্রতি সহিংস হয়ে উঠছে? তিনি বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধের সব কর্মসূচি কেবল নারীকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ঘরে-বাইরে বা সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে কোন কাজ হয় না।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, নারী অধিকারের আন্দোলনকে মৌলিকভাবে পুরুষের আন্দোলনে পরিণত করা না গেলে বাস্তবে নারীর অধিকার রক্ষা করা কঠিন। কারণ সংশোধনটা দরকার প্রথমে পুরুষের। আর সেখানে আরও বেশি কাজ করা উচিত।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা বলেন, জেন্ডার নিয়ে আলোচনা উঠলেই পুরুষরা এটিকে কেবল নারীর বিষয় বলে গণ্য করেন। এই মনোভাব পরিবর্তনের সময় এসেছে। পরিবার ও সমাজে পুরুষকে অবশ্যই সক্রিয় কর্তা হিসেবে কাজ করতে হবে। তবেই কমবে নারীর প্রতি সহিংসতা।