যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড বলে মনে করছেন কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান। আর এই ষড়যন্ত্রে ছিলো পাকিস্তানও। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনা বিষয়ক টাস্কফোর্সের একজন সদস্য হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি এ মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপির ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের এক ভিডিওতে তৎকালীন মার্কিন কুটনীতিকদের যেমন দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সময়কে তার থেকে ভিন্ন কিছু বলে মনে করেন না এই কুটনীতিক। তার মতে, পার্থক্য এটাই যে বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। আর একাত্তরেই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পরোয়ানা সই করে রেখেছিলেন কিসিঞ্জার, যখন তিনি পাকিস্তানের সাথে কনফডোরেশনের চুক্তি মেনে নেননি। সেই কথা জেনেভায় পৌঁছে ওয়ালিউরকে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
কুটনীতিক ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জানতেন না যে, এই লোকটি (কিসিঞ্জার) একজন নিকৃষ্ট হারামজাদা। তিনি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।’
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সাথে খুনিদের ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৬ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। নিজের দূতিয়ালি জীবনের বন্ধুদের সাথে নিবিড় যোগাযোগে তিনি তখন জানতে পারেন, লিবিয়ার বেনগাজীতে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে অবস্থান করছে হত্যাকারীদের পুরো দলটি। লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল রহমান শালগাম তাদের লিবিয়ায় প্রেসিডন্ট গাদ্দাফির সাথে বৈঠক করতে বলেন।
ওয়ালিউর রহমান বলেন, লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল রহমান শালগাম বললেন আপনি আসেন, আমি প্রেসিডন্টে গাদ্দাফির সাথে আপনার আলাপ করিয়ে দেবো। আমি গাদ্দাফিকে রাজি করাবো এবং তাদের (বঙ্গবন্ধুর খুনীদের) গ্রেপ্তার করা হবে।
মার্কিন সমর্থন, পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতা, লিবিয়ার সরাসরি সাহায্যে তখন খুনির দল এতোটাই শক্তিশালী যে, বেনগাজি যাওয়ার আগে মাল্টাতে গভীর রাতে হামলার খবর আসে। যদিও আগে থেকেই নানা সতর্কতা জারি করেছিলেন মাল্টার পুলিশ কমিশনার। রাত আড়াইটায় ছাড়তে হয় হোটেল।
এ কুটনীতিক বলেন, লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সুটকেসের ভেতর যা আছে সব কিছু নিয়ে চলে আসুন। তিনি এমনটা কেন বলছেন, তা জানালেন না। স্পেশাল পুলিশ বহরের পাহারায় আমাদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আনা হলো। এ সময় লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানান, রাশেদ আপনাদের হত্যা করতে পেশাদার খুনি পাঠিয়েছে।
মাল্টা থেকে ফিরে এলেও টাস্কফোর্সের কাজ চলছিলো। একটা লম্বা বিরতির পর খুনি শরিফুল হক ডালিমের খোঁজ মেলে কেনিয়াতে। তথ্য বলছে, এখনও পাকিস্তানি পাসপোর্টে সেখানে আছে খুনিদের একটি ঘাঁটি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে কজন খুনি জীবিত আছে, তারা সকলে পাকিস্তানের পাসপোর্টধারী।
তিনি আরও বলেন, সবশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকতে অ্যাটর্নি জেনারেল বার যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা খুনি রাশেদ চৌধুরীর ফাইলের খোঁজ করেছিলো।
একাত্তর/আরবিএস