বর্তমান বাজার দর ও অন্য দেশের মজুরি কাঠামো বিবেচনায় পোশাক শ্রমিকদের যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তা পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পোশাক শ্রমিকদের ওপর ‘বলপ্রয়োগ’ ও মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানান তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, তৈরি পোশাক শিল্প আমাদের দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। অথচ, এ শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য মজুরির দাবি জানিয়ে আসছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছিল। মজুরি নির্ধারণে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিক প্রতিনিধি ২৩ হাজার মজুরির দাবি উত্থাপন করেছিলেন। সরকার শ্রমিকদের দাবি উপেক্ষা করে মালিকদের প্রস্তাব অনুযায়ী ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি চূড়ান্ত করেছে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে এই মজুরি যৌক্তিক নয়। এই মজুরিতে শ্রমিকদের পক্ষে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
ওই বিবৃতিতে সাবেক ছাত্রনেতারা আরও বলেন, শ্রমিকদের ন্যায়সংগত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ ও শ্রমিকের নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। দমন-পীড়ন বন্ধ করে বর্তমান বাজারদর এবং অন্যান্য দেশের মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করে শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করার জন্যে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে, শ্রমিকদের অসন্তোষ ও মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন প্রশমিত হবে না। এর ফলে, পুরো গার্মেন্টস সেক্টর ভবিষ্যতে আরও গভীর সংকটে নিপতিত হবে।
বিবৃতিতে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে স্বাক্ষর করেন- নাজমুল হক প্রাধান, আমীরুল হক আমীন, শফি আহমেদ, আকতার সোবহান মাশরুর, সোহানুর রহমান সোহান, আমিনুল ইসলাম, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সুজা উদ্দিন জাফর, মোশরেফা মিশু, মোখলেস উদ্দিন শাহীন, এম এ আওয়াল, বেলাল চৌধুরী, রাজু আহমেদ, সিরাজুম মনির, জাহেদ ইকবাল খান, সালেহ আহমেদ, কামাল হোসেন বাদল, রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাগীব আহসান মুন্না, এস এম আকরামুল হক, পারভেজ হাসেম।
পোশাক কারখানা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ আশপাশের কারখানায় আন্দোলন চলছে।
এরইমধ্যে মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করেছে সরকার, যা পহেলা ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
সবশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পাঁচ বছরের জন্য পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করে সরকার। সে অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরি ঘোষণা করার দাবি ছিলো শ্রমিকদের।
পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার। গত ২২ অক্টোবর এই বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেন। আর মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়।
ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে- এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে আন্দোলন শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। পরে তা আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।