ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু আয়ানের মৃত্যু নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই মিললো আরেক অভিযোগ। দুই ব্যবসায়ী অংশীদারকে বের করে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নানান প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ উঠেছে ইউনাইটেড গ্রুপের বিরুদ্ধে।
ওই দুই অংশীদারের অভিযোগ, তাদের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন গ্রুপের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক।
ইউনাইটেড গ্রুপ দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৮ সালে প্রায় শূন্য থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠান এখন প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, সুপারশপ ইউনিমার্ট, সেই সাথে বিদ্যুৎ–জ্বালানি, রেস্টুরেন্ট, আবাসন, হোটেল ও বেসরকারি বন্দরসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা রয়েছে ইউনাইটেডের। প্রতিষ্ঠানটির এই সাফল্যের পুরোটা জুড়েই আছে প্রথমে তিন ও পরে ছয় জনের অকৃত্রিম বন্ধুত্বের গল্প।
যে গল্প এক সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ৬ অংশীদার একই বেষ্টনীর ভেতর ৬টি একইরকম বাসভবন তৈরি করেছেন। ব্যবহার করছেন একই রকম গাড়ি।
কিন্তু সেই বন্ধুত্ব এখন শত্রুতায় রূপ নিয়েছে। ঐক্যে ধরেছে ফাটল। ৬ বন্ধুর দু’জন তাদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে বের করে দেবার অভিযোগ করেছেন। এ জন্য তারা দায় দিচ্ছেন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও হাসান মাহমুদ রাজাকে।
ইউনাইটেড গ্রুপের অংশীদার ফরিদুর রহমান খান বলেন, ক্লাস ফাইভ থেকে আমরা একত্রে পড়াশোনা করতাম।
কেন এই বন্ধুত্বে ফাটল? তারা জানালেন, পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব দেয়া নিয়েই ঝামেলার সূচনা।
একাত্তরকে জানিয়েছেন, কীভাবে একই বেষ্টনীর ভেতরে তাদের বাড়ির গ্যাস পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়।
আইনজীবী খন্দকার রেজা ই রাকিব জানালেন, আদালতের আদেশে আপাতত পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হলেও দুই অংশীদারের পাওনার বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি।
তিনি বলেন, সাতারকুলে যে ছয়টা বাড়ি ছয় অংশীদারের- তার মধ্যে যে যার যার মতো আছেন। এর মধ্যে দুইটা বাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো। বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর থেকে স্বাভাবিক আছে।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পাঁচ বছর বয়সী আয়ানকে খতনা করানোর জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল পরিবার। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি তার।
পরে তাকে গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত ৭ জানুয়ারি সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা করেন। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন, অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
এরপর লাইসেন্স না থাকায় গত ১৫ জানুয়ারি সাঁতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।