একটি উপ-নির্বাচন ছাড়া ফরিদপুর-১ আসনে কখনই বিএনপি জেতেনি। তবে বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চায় কমপক্ষে ২০ জন প্রার্থী। আর বরাবরের মত আওয়ামী লীগের কোন্দলের সুযোগ নিতে চায় বিএনপি নেতারা। পাশাপাশি এই আসনে প্রচারে রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীও। আর আড়ালে কর্মকান্ড চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীও।
আলফাডাঙ্গা এবং মধুখালী উপজেলা জুড়েই মধুমতির নদীর ভাঙনে প্রতি বছরই ভিটে মাটি হারায় মানুষ। আলফাডাঙ্গার চরডাঙা, চর আজমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো ভাঙছে মধুমতি। আর মধুখালীতে নদী ভাঙনের কবলে হারিয়ে গেছে বীর শ্রেষ্ঠ্য মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি যাদুঘরসহ কমপক্ষে সাত আটটি গ্রাম।
ফরিদপুরের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর-১ আসনে নৌকার পক্ষে এখন পর্যন্ত ২০ জনের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই বিগত দিনে এলাকায় ছিলেন না। আবার দুই একজনকে নিয়মিত এলাকায় দেখা গেলেও কয়েকজনকে মাঝে মাঝে এলাকায় দেখা গেছে। দলীয় এমপি থাকার পরেও নেতাকর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ ছিলো না।
গত সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী মনজুর হোসেন বুলবুল এবারও প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সবার আগে। এ ছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান, কাজী সিরাজুল ইসলাম, ডা. দিলীপ কুমার রায়, আরিফুর রহমান দোলন।
আরও আছেন বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মুছা মিয়া, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, শিল্পপতি সৈয়দ শামীম রেজা, শ্রমিক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদা বেগম কৃক, প্রবাসী নেতা শাখাওয়াত হোসেনসহ আরও অনেকে।
এদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থেকে প্রচার চালিয়ে গেলেও বেশিরভাগ প্রার্থী ভোটকে সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন এ আসনের ভোটাররা। মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে আব্দুর রহমানকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঈদ, পূজাসহ সব ধরণের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে বিগত দিনগুলোতে।
আবদুর রহমান মনে করেন আগের দুই মেয়াদে যে উন্নয়ন হয়েছে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। তিনি বলেন, দলীয় সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই মেনে নেব। তবে তিনি প্রত্যাশা করছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবার ফরিদপুর-১ আসন থেকে তাকে মনোনয়ন প্রদান করবেন।
এদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত চার জন। তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহ মো. আবু জাফর, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের-সহ সভাপতি নাসিরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ নিউটন মিয়া এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজুল আকিল ডেভিড সিকদার।
ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ছাড়া অন্য দলের তেমন কোনো প্রভাব নেই। একসময় জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর বেশ দাপট থাকলেও সেই চিত্র এখন পাল্টে গেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কিছুটা প্রভাব থাকলেও তাদের তেমন কোনো ভোট নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীর জেলা কমিটির কর্মপরিষদের সদস্য ও মধুখালী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেছেন।
সবশেষ তথ্য বলছে, এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৩ লাখ ২১ হাজার ৬০৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৪ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৫ জন।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মনজুর হোসেন। তিনি মোট ভোট পান ৩ লাখ ৪ হাজার ৬০৭ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী শাহ্ মো. আবু জাফর পান ১১ হাজার ৫০ ভোট।
এর আগে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে এক লাখের বেশি ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুর রহমান। তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় বেশ উন্নয়নমূলক কাজ করেন।