জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ফরিদপুর-৩ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। ফলে এটি জাতীয় সংসদের অন্যতম ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন হেভিওয়েট সব প্রার্থীরা। এ আসনে সর্বোচ্চ পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী চারবার আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হন দু’বার।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগে মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই আসন। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিটিং, মিছিল, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড ও অসহায় ছিন্নমূল মানুষের মাঝে আর্থিক সহযোগিতাসহ নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তারা।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কমপক্ষে ছয় জন। বিএনপিতেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী। ২০০৮ সাল থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। এর আগে ১৯৭৩ সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইমাম উদ্দিন আহমেদ জয় লাভ করে। আর ২০০৮ সাল থেকে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জয়লাভের মাধ্যমে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে।
২০২০ সালের ৭ জুন সরকারের শুদ্ধি অভিযানে এমপি খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আস্থাভাজনসহ তার সমর্থিত বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী মামলার গ্যাঁড়াকলে আটকে যান। আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকার মামলাসহ একাধিক মামলায় অনেকেরই জায়গা হয় জেলহাজতে।
অপরদিকে বিএনপি ডাকসাইটে নেতা, সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মৃত্যুর পর আভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে দলটি। যদিও দুই বছর ধরে দলটির কমিটি না থাকায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হলেও গত দেড় বছর আগে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর পুনরায় সংগঠিত হয় দলটি। বিএনপি নির্বাচনে গেলে কমপক্ষে তিনজন মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পদ্মা নদী ঘেরা ফরিদপুর সদর উপজেলার একটি বড় অংশ চর। মরা পদ্মা পাড়ি দিয়ে এসব চরে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ইঞ্জিনচালিত নৌকা। একসময় সেখানে যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল ট্রলার। সেখানে রয়েছে সাবমেরিন কেবলে বিদ্যুৎ সংযোগ, পাকা সড়ক ও সেতু। গোটা চর এখন উৎসব মুখর
ভোটররা মনে করেন, বিভাগ উন্নয়নের দাবি পূরণ হলে তাদের আর চাওয়া পাওয়ারে কিছু থাকতো না। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন । তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় এই মুহূর্তে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন জেলা সভাপতি শামীম হক। দেশের বাইরে থাকলেও ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ নৌকার প্রার্থী হতে চান বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তবে নৌকার মাঝি হতে মনোনয়ন পেতে মাঠে দারুণভাবে সক্রিয় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি এ কে আজাদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের বার্তা জনগণের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন।
এ কে আজাদ বলেন, আমি দলের দুঃসময়ে সব সময় পাশে ছিলাম। বর্তমানে আছি, ভবিষ্যতে থাকব। আমি দলের কাছ থেকে কিছু নিতে আসিনি। সুখে-দুঃখে সব সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চাই। সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে চাই। আমার বিশ্বাস, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে এবং বিজয়ী হব। মনোনয়ন না দিলেও নৌকার পক্ষে কাজ করে যাবো।
এ ছাড়া মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক, সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক হোসেন। এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সভা-সমাবেশ করছেন। সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দলীয় আসনটি ধরে রাখতে চাইছেন।
অন্যদিকে জাতীয়ভাবে এখনো বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না ঘোষণা না দিলেও দলীয় সমর্থনের আশায় একাধিক প্রার্থী এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। নির্বাচনে একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়নের আশায় এলাকার নেতা-কর্মীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। আর জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু।
অন্যদিকে এই আসনে বড় দুই দল ছাড়া অন্য দলগুলো তেমন সক্রিয় নয়। তবু তারাও নির্বাচন ঘিরে কিছুটা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আসনটিতে পুরুষ ভোটার ২,০১,৮৩৬ জন, নারী ভোটার ২,০০,৮২৯ জন ও তিনজন হিজড়া ভোটার, মোট ভোটার ৪,০২,৬৬৮ জন।