উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছে দুই শতাধিক। তার মধ্যে অনেকেই ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ভোটে অংশ নিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারেননি তারা। কারণ তাদের পক্ষে ভোট পড়েছে কম এবং অনেকেই কম ভোটের কারণে জামানত হারিয়েছেন।
আবার কোথাও একাধিক বিএনপি প্রার্থী থাকলেও সেখানে বেশিরভাগই পরাজিত হয়েছেন। এছাড়া কোথাও কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেননি বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতারা।
সুনামগঞ্জের দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত সাত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। তারা বিজয়ী প্রার্থীদের মোট ভোটের চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন। অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি। কেউ কেউ জামানতও হারিয়েছেন। সাধারণ ভোটার ও দলীয় কর্মীরা বলছেন, ওই নেতাদের ‘আম-ছালা’ সবই গেছে।
জামালগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল হক আফিন্দী আনারস প্রতীক নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীমের মোটর সাইকেল প্রতীকের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।
শামীম ২৮ হাজার ৯০৩ ভোট পেয়েছেন। আফিন্দী পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৪৫ ভোট। এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার সাংবাদিক আকবর হোসেনের মাইক প্রতীকের কাছে হেরেছেন ১০ হাজার ৩৮৪ ভোটের ব্যবধানে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি হারুনুর রশিদ হেলিকপ্টার প্রতীকে ১১ হাজার ৬২২ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদার ১৬ হাজার ১৯২ ভোট পেয়েছেন।
দ্বিতীয় হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার বর্মণ। এই উপজেলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক নেতা মোহন মিয়াকেও বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। তিনিও তৃতীয় হয়েছেন।
এই উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা দলের আহ্বায়ক মদিনা আক্তারকেও বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। তিনি যুবলীগ নেত্রী মরিয়ম জান্নাতের কাছে ১৮ হাজার ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। মরিয়ম পেয়েছেন ২৩ হাজার ৮০৬ এবং মদিনা আক্তার পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৩২ ভোট।
তাহিরপুরে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবুল কাশেম প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কার হন। আবুল কাশেম মাত্র ৪ হাজার ৪৬০ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. আফতাব উদ্দিন। তিনি ৩৭ হাজার ৪৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
ধর্মপাশায় উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম চৌধুরী চেয়ারম্যান পদে জামানত হারিয়েছেন। তিনি মাত্র ২ হাজার ৬৬ ভোট পেয়েছেন। এভাবে চারটি উপজেলার কোনটিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি বিএনপি’র বহিষ্কৃত প্রার্থীরা।
জামালগঞ্জের পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার বলেন, কেবল তৃণমূল বিএনপিই নয়, সব মানুষই আমাকে ভোট দিয়েছে। তবে ভোটের প্রতি মানুষের এক ধরনের অনীহার কারণে অনেক ভোটারই কেন্দ্রে আসেননি। তারা আসলে আমি আরো বেশি ভোট পেতাম।
পঞ্চগড়ে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। পাঁচটি উপজেলার চারটিতে বিএনপির ৯ জন নেতা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে মাত্র দুজন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। তাঁরা দুজনই নারী।
তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা হলেন, তেঁতুলিয়ায় মুক্তারুল হক, বোদায় হাবীব আল আমীন এবং দেবীগঞ্জে রহিমুল ইসলাম। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ছয়জন। তাঁরা হলেন, পঞ্চগড় সদর উপজেলায় কাজল রেখা, তেঁতুলিয়ায় সুলতানা রাজিয়া, বোদা উপজেলায় লাইলী বেগম ও মোরসালিন বিন মমতাজ, দেবীগঞ্জে আব্দুর রহিম, তেঁতুলিয়ায় খন্দকার আবু সালেহ ইব্রাহীম। সুলতানা রাজিয়া ও লাইলী বেগম ছাড়া বাকি চারজনই পরাজিত হয়েছেন।
তিন উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের প্রাপ্ত ভোট স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, এবারের উপজেলা নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের ‘একতরফা’ হলেও ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। ফলে বিএনপির পরিচয়ে প্রার্থী হওয়া নেতাদের এত কম ভোট পাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির দুই নেতা। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কৃতও হন তারা। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো দূরের কথা, জামানত হারিয়েছেন দু’জনই। তাদের মধ্যে একজন ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩২১টি। নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী প্রদত্ত ভোটের ৮ শতাংশ না পেলে জামানত হারাতে হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে।
ঘিওরে গত মঙ্গলবার ভোট পড়ে ৬৪ হাজার ৫২৭টি। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার লিয়াকত হোসেন পেয়েছেন মাত্র ৩২১ ভোট। তিনি ভোটের মাঠে নামায় জেলা বিএনপির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কৃত হন। অপর বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান পেয়েছেন ৩ হাজার ৭১৩ ভোট। তিনি জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ভোটে নেমে দল থেকে বহিষ্কার হন তিনিও।