দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য হবে সেগুলোর কাজ এগিয়ে যাবে। যেগুলোতে ঐকমত্য হবে না সে বিষয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি জানান, রোববার রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার সুপারিশ জমা দেবে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সাথে বৈঠক করতে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। প্রায় এক ঘণ্টার এই বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, আগামী নির্বাচন, সংস্কার ও দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বলেন, যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হবে তা বাস্তবায়নের পক্ষে বিএনপি।
তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকটি হলো এমন দিনে, যেদিন অন্তর্বর্তী সরকারের ঐকমত্য কমিশন তার প্রথম সভায় বসতে যাচ্ছে। নির্বাচন আগে-পরের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে বিষয়গুলো আমরা একমত হব, সেই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন দল বিভিন্ন চিন্তা ও দর্শন রয়েছে। সবাই যদি মনে করে সব বিষয়ে সবার ঐকমত্য হবে তাহলে এত দলের দরকার নাই।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাকশাল নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু আমরা তো আবার বাকশালেও ফিরে যেতে চাই না। যেখানে ঐকমত্য হবে, সেখানে তাৎক্ষণিক সমাধান করা যাবে। যেখানে ঐকমত্য হবে না… আগামী দিনে নির্বাচনে প্রত্যেকটি দল তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে, ইশতেহার নিয়ে, চিন্তা নিয়ে জনগণের কাছে যাবে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যে সংসদ হবে সেখানে বাস্তবায়ন করবে।
জনগণ সমর্থিত সরকার ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারবে না এবং জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন বলেও মন্তব্য করেন আমীর খসরু।
জনগণের সমর্থিত সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে মত দিয়ে তিনি বলেন, সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে পারলে অনেকগুলো সমস্যা সমাধান হবে। দেশ অনেকগুলো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, এগুলো একটা পলিটিক্যাল উইং ছাড়া সমাধান করা কঠিন। এজন্য আলোচনায় এ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ডিসেম্বর ‘অনেক দেরি’ মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, তারপরেও ডিসেম্বর 'কাট অফ টাইম' হিসেবে ধরে নিয়েছে সবাই। সবার ধারণা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে আমরা সঠিক পথে থাকব।
তিনি বলেন, দেশে ও দেশের বাইরের সব বাংলাদেশি ভাবছেন, নির্বাচন কবে হবে, কবে দেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আসবে। দেশে একটি সরকার আছে কিন্তু এখনো গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আসেনি। সেটা না এলে জনগণ সমর্থিত একটা সরকার ব্যতীত কোনো অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, পুলিশ সাপোর্ট দিয়ে সেটা দাঁড়াতে পারবে না। সেটা আমরা লক্ষ্য করছি।
আমীর খসরু আরও যোগ করেন, জনগণের সমর্থিত সরকার, সংসদ- যা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। অনেক সমস্যার পলিটিক্যাল উইং ছাড়া সমাধান করা কঠিন। এজন্য আলোচনায় এ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংস্কার নিয়ে যে আলোচনা, সে বিষয়ে খসরু বলেন, যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য হবে, সে বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাব। যে বিষয়গুলো ঐকমত্য হবে না, সেটি সাংবিধানিক হোক, নির্বাচনি হোক বা অন্য যে কোনো বিষয়ের হোক, আগামী নির্বাচনে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার।
তারা জনগণের কাছে উপস্থাপন করবে, জনগণের মতামত নিয়ে এসে সংসদে আলোচনা হবে, তর্ক হবে, বিতর্ক হবে তারপর সংসদে পাস হবে। বৈঠকে আলোচনাটা এইভাবেই হয়েছে।
ইইউতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আগামী দিনের ইইউর সঙ্গে আমাদের কর্মপন্থা কী হবে তা আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন ঘিরে, সংস্কার ঘিরে ইইউ সহযোগিতা করতে রাজি আছে। বিশেষ করে ইলেকট্রো প্রসেস থেকে শুরু করে যে প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে তা সংস্কার, পরিবর্তন, এগুলো সঠিক জায়গায় ফিরে আনার জন্য তারা এগিয়ে আসতে রাজি আছে।