দেশের সংবিধান ভারতের প্রেসক্রিপশনে তৈরি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। তাদের দাবি, শেখ মুজিবের একচ্ছত্র ক্ষমতা নিশ্চিত করতেই ৭২ এর সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। যা গেলো ৫৪ বছরেও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোন কাজে আসেনি।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে দলটির নেতারা বলেন, এর মধ্যে সংসদ সদস্যরা দল ও নির্বাচিত সরকারের দাসে পরিণত হন। তাই সংবিধান সংস্কার নয়; বরং নতুন করে লেখা উচিত বলে মনে করে এনসিপি।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে শেরে বাংলা নগরে সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকের প্রথমার্ধ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা এনসিপির নেতারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, আহবায়ক নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহবায়ক সরোয়ার তুষার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা শারমিন প্রমুখ।
দল গঠনের আগে থেকেই ৭২ এর সংবিধান নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা। সংবিধানের চারটি মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্র ছাড়া আর কোনটিরই পক্ষে নন দলটির নেতারা। তাদের মতে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই তিনটি নীতির সঙ্গে কখনও দেশের মানুষের ও ঐক্যমত ছিলোনা।
সদস্য সচিব আখতার বলেন, সংবিধানের আলোচনা করেছি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট এখনও কেনো জমা হয়নি আলোচনা হয়েছে। সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কথা বলেছি। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিরঙ্কুশের বিষয়ে কথা বলেছি। আমাদের ক্ষমতা হস্তান্তর যাতে ভালোভাবে হয় সে বিষয়ে কথা বলেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনসিপি মনে করে যে এজেন্ডা নিয়ে এসেছে তা পূরণ করতে হবে, বিচার এবং সংস্কারকে দৃশ্যমান করতে হবে। তারপর নির্বাচন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ১৬৬টি বিষয়ের মধ্যে ১২৯টি বিষয় একমত হয়েছি। আমরা নোট দিয়েছি। মূলত তিনটি বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছি। প্রোটেকশন অব সিটিজেন, পিসফুল ট্রান্সজেকশন অব পাওয়ার, সত্তর অনুচ্ছেদ নিয়ে কথা হচ্ছে সংসদকে আরও বেশি কার্যকরের জন্যে।
তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন, আমরা দুটি নির্বাচন চাই। আসলে আমরা একটি নির্বাচনই চাই। যার নাম হবে আইনসভার নির্বাচন। সেটা পরে গণপরিষদের মর্যাদা পাবে। কারণ যেকোনও সংশোধনী পরবর্তী সরকার চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যেমন-বিগত সরকারের ১৫তম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। গণপরিষদের নির্বাচনের মাধ্যমে করা আমাদের এখনকার সংশোধনীগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
সারোয়ার তুষার বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের একচ্ছত্র ক্ষমতা ও একটি দলের মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে ভারতের প্রেসক্রিপশনে এই সংবিধান তৈরি হয়েছিলো। আমরা দুটি নয়, একটি নির্বাচনই চাই, আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে আমরা আইনসভা নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদের স্ট্যাটাস নিয়ে হোক।
হান্নান মাসউদ বলেন, ৭২ এর সংবিধানকে মুক্তিযুদ্ধের আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়নে ব্যর্থ। তাই এটি নতুন করে লেখা হোক।
বর্তমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে দলটির নেতারা বলেন; এটি একজন সংসদ সদস্যকে দলীয় দাসে পরিণত করে। এ ব্যাপারে আছে এনসিপির নিজস্ব প্রস্তাবনা।
প্রয়োজনে সংসদে কন্ঠভোটের বদলে গোপন ভোটের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে বৈঠকে আছেন– কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।