ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার বাংলাদেশের আলোচিত অর্থ পাচারকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে বিচার বিভাগীয় রিমান্ডে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতার নগর দায়রা আদালত।
শুক্রবার (২৭ মে) পি কে হালদারসহ ছয়জনকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করা হলে আগামী ৭ জুন পর্যন্ত তাঁদের এ রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারপতি সৌভিক ঘোষ। তদন্ত সংস্থা ইডি ১৪ দিনের বিচার জেল হেফাজত চাইলে আদালত ৭ জুন পর্যন্ত মঞ্জুর করেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) জানিয়েছে, পুরো ভারতে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছে পি কে এন্ড গং। বাংলাদেশে থেকে পাচার হওয়া বেশিরভাগ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে আবাসন খাতে।
গেলো ১৪ মে কলকাতায় গ্রেপ্তার হন পি কে হালদার। তার সঙ্গে ভাইসহ আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এরপর দুই দফায় তাঁদের মোট ১৪ দিনের জন্য রিমান্ডে নেয় ইডি।
পি কে ও তার পাঁচ সহযোগীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে ইডি’র আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী শুক্রবার আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের জানান, পি কে এন্ড গংদের কাছ থেকে এরিমধ্যে যা জানা গেছে তাকেই বিস্মিত হয়ে পড়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
ইডি সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে পি কে হালদারের পাচার করে আনা টাকার অঙ্ক ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটির বেশি।
তাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের এক নম্বর শহরগুলোয় যদি পি কে সম্পত্তি কিনে থাকেন তা বেচলেও তার মূল্য এক হাজার কোটি রুপির বেশি হতে পারে না।
তাহলে বাকী টাকা কোথায় গেল? হয় পিকে নিজেই কোথাও সরিয়ে রেখেছেন বা কেউ নিয়েছে। নিলে কারা নিলো? সব মিলিয়ে পি কের থেকে ৩০০ কোটির কম রুপি নগদ অর্থ পেয়েছে ইডি।
পি কের মোবাইল ফোনের বিভিন্ন গ্যাজেট খুলে দেখা গেছে তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে।
একইভাবে বাংলাদেশের অনেক রথী মহারথীর সঙ্গ পি কে হালদারের যোগাযোগ আছে। তবে ইডি’র মতে পি কে ঘনিষ্ঠ বেশিরভাগই ব্যক্তিই বাংলাদেশি।
পি কে হালদার কাদের সহযোগিতায় অর্থ লোপাট ও পাচার করেছেন, সে সম্পর্কে ইডির কাছে শুরুতে বেশ সহায়তা করলেও, এখন আর তা করছে না বলে জানা গেছে।
পি কের কললিস্ট ট্র্যাক করে জানা গেছে, তার আরও সহযোগী বিদেশে পালিয়ে আছে। চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশি এক কর্মকর্তাকে, যিনি সিঙ্গাপুরবাসী।
গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত সেই কর্মকর্তার কাছ থেকে থেকে প্রচুর কল ঢাকা থেকে থেকে এসেছে। তার মধ্যে একাধিক ঝগড়া কথোপকথনও আছে।
বহুবার ঢাকা, ভারত, সিঙ্গাপুর ও কানাডায় গিয়েছেন পি কে হালদার। ভারতীয় অবৈধ পাসপোর্টে শিবশঙ্কর হালদার নামে টুরিস্ট ভিসায় দু’মাস কানাডাতে ছিলেন তিনি।
এর সঙ্গে পি কের কাছে তিন দেশের নাগরিক হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে ইডি। বাংলাদেশ, ভারত ও গ্রেনেডা এই তিন দেশের একাধিক নাগরিকত্বের নথি, পাসপোর্ট পেয়েছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: উড়োজাহাজ ক্রয়ে স্কাই এয়ারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ
যদিও পিকের আইনজীবী শেখ আলী হায়দার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। এদিকে, দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, ভারতের আদালত পিকে হালদারকে দোষী সাব্যস্ত কোরে শাস্তি দিলেও তাকে দেশে ফেরাতে কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত পি কে হালদারকে গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার অশোকনগর থেকে আরও পাঁচ বাংলাদেশির সঙ্গে গ্রেপ্তার করে ইডি।
গ্রেপ্তারের পর ইডি জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর ও আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন পি কে হালদার। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে এসব পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে শিবশঙ্কর হালদার নামে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছিলেন।
একাত্তর/এসজে