কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ রচিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ৭ মার্চের প্রেক্ষাপটে। সেই কবিতা অবলম্বনে এবার একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শামীম আল আমিন। নিউইয়র্কের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রতাপ দাসের প্রযোজনায় এই প্রামাণ্যচিত্রে অংশগ্রহণ করেছেন দেশবরেণ্য অনেকে। আগামী ৭ মার্চ উপলক্ষে প্রামাণ্যচিত্রটি মুক্তি দেয়া হচ্ছে।
শনিবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় নিউইয়র্কের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে মুক্তিযোদ্ধা ও সুধীজনদের উপস্থিতিতে আগামী এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখানো হবে বলে নির্মাতা শামীম আল আমিন জানান। তবে দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বিকেল ৪টায়।
বাংলাদেশি আমেরিকান আর্টিস্ট ফোরামের শিল্পীরা তখন এক ফ্রেমে মুক্তিযুদ্ধের একটি যৌথ চিত্রকর্ম তৈরি করবেন। অনেক শিল্পী মিলে একটি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলবেন বাংলাদেশের ছবি। একই সঙ্গে বিশিষ্ট ভাস্কর আখতার আহমেদ রাশার মুক্তিযুদ্ধের উপর একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনী প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধ উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। থাকবে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এতে বিশিষ্ট শিল্পীরা গান, কবিতা ও নাচে অংশ নেবেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস-বিপার শিল্পীদের দলীয় নৃত্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হবে। এরপর থাকবে শিল্পী সিতেশ ধর, মৃদুল আহমেদ এবং জেরিন মাইশার অংশগ্রহণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’ কবিতার উপর ভিত্তি করে ভিন্নধর্মী একটি পরিবেশনা।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। এরপর প্রামাণ্যচিত্রটির উপর মুক্ত আলোচনা। অংশ নেবেন মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক ড. নুরুন নবী, মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী তাজুল ইমাম, বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকির আহমেদ, সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ এবং নেপালের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপক রনিয়ার। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে থাকবে মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী তাজুল ইমামের নেতৃত্বে জাগরণের গান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন এজাজ আলম ও সাবিনা নীরু। প্রদর্শনীসহ সব আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এদিকে প্রামাণ্যচিত্রের প্রযোজক প্রতাপ দাস বলেন, ‘যে কবিতাকে উপজীব্য করে আমরা প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করছি; সেটি কবি নির্মলেন্দু গুণের অসাধারণ একটি সৃষ্টি। আসলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চ যেভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, পথ দেখিয়েছিলেন সেই আলোকে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে। ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে চমৎকার ও বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরার প্রয়াস আমাদের ছিল। আশা করছি ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি প্রামাণ্য দলিল হয়েই থাকবে।’
নির্মাতা শামীম আল আমিন আর বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাসের উজ্জ্বলতম একটি অধ্যায় সঠিকভাবে তুলে ধরার সবধরনের প্রচেষ্টা আমরা নিয়েছি। বিশেষ করে বিদেশে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররা যেন বুঝতে পারে, সেজন্য ইংরেজি সাপটাইটেলও যুক্ত করা হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।’
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কবি নির্মলেন্দু গুণ ছাড়াও প্রামাণ্যচিত্রটিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুন হাবীব।
প্রামাণ্যচিত্রে কবিতাটি আবৃত্তি করছেন খ্যাতিমান অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, ধারা বর্ণনা দিয়েছেন শিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গীতায়োজনের সঙ্গে দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বাপ্পা মজুমদার।
এছাড়া টাইপোগ্রাফি ও পোস্টার করেছেন মামুন হোসাইন, কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করছেন লেখক দীপেন ভট্টাচার্য, সাবটাইটেল করেছেন ইয়াসমিন ইতি, ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছেন মোমিনুল ইসলাম মোমেন, ভিডিও সম্পাদনা করেছেন সঞ্জীব মিলন, শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন নীল মাহাবুব এবং কারিগরি সহায়তা দিয়েছে ধ্বনিচিত্র। প্রামাণ্যচিত্রটির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন সাংবাদিক পারভেজ নাদির রেজা।
একাত্তর/এসজে