নূর নাহিয়ান বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে পরিবর্তনের একজন অগ্রদূত। ২০০৮ সালে একটি দুর্ঘটনায় তার জীবন হয়ে পড়ে হুইলচেয়ার নির্ভর। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। বরং এটি তার জীবনের একটি নতুন দীগন্ত উন্মোচন করে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ তৈরি করা এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তির পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে কাজ শুরু করেন তিনি।
২০১৫ সালে তিনি হুইলচেয়ার ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। যা সারা দেশে হুইলচেয়ার ক্রিকেট প্রচার করতে সহায়তা করে। তিন বছর পর প্রতিষ্ঠা করেন নূর বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন। যা বর্তমানে ১০০ জনেরও বেশি প্যারা-অ্যাথলেটকে ৯টি ভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানের ইএমকে সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আয়োজিত ‘Alumni Talk: American Diversity through Bangladeshi Voice’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সেই অনুপ্রেরণার গল্পই নূর তুলে ধরলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম অধীনে নূর এ বছর ওয়াশিংটন ডিসি, কানসাস সিটি, ডেট্রয়েট এবং সান দিয়েগোতে সফর করেন।
সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, এটি তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বলেন, এটি আমার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিলো।
এ ভ্রমণে ওয়াশিংটন ডিসি, কানসাস সিটি, ডেট্রয়েট এবং সান দিয়েগোতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ও যুব সম্পৃক্ততার বিষয়ে শেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার বিনিময় করেন। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্যও এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
IVLP প্রোগ্রাম থেকে নূরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল সম্প্রদায়-ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমের ভূমিকা। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে নূর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা যদি সঠিক দিকনির্দেশনা পায় তবে তারা সামাজিক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে। তিনি প্রস্তাব দেন যে, স্কুল পর্যায়ে সামজিক সেবাকে পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা তরুণদের মধ্যে দায়িত্বশীলতার বোধ তৈরি করতে পারে, যা তাদের ভবিষ্যতের নেতা ও সমাজের জন্য কার্যকর করতে সহায়ক হবে।
নূর বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আরও উন্নত সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি প্রথমবারের মতো দেখেন কীভাবে অবকাঠামো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনকে সহজ করতে পারে। ‘অ্যাক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি,’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের নীতিমালা কার্যকর করার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ-সুবিধার ফাঁক কমানোর ওপর জোর দেন।
নূর শুধুমাত্র খেলাধুলা নয়, সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলেন। তিনি ডিজিটাল অ্যাক্সেসিবিলিটির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন যে, সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহজেই সেসব ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে। এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন সৈয়দা কাশফি চৌধুরী।