প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম রোববার থেকে শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা সুষ্ঠু ভাবে সিট পেলেও এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে। উপাচার্য জানিয়েছেন, আগামী দিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি অনুসরণযোগ্য প্রতিষ্ঠান।
নতুন পরিবেশে ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই উৎসবমুখর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রায় তিন মাস পর সশরীরে ক্লাস শুরুর মধ্য পুরোপুরি সচল হলো এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এতে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা দলে-দলে বিশ^বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। সকাল ১০ টার মধ্যে হাজার-হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে ক্যাম্পাস মুখর হয়ে ওঠে। এ যেন এক অপূর্ব মিলনমেলা। ক্লাস শুরুর আগে জুলাইয় অভ্যুত্থানে সব শহীদ ও হতাহতদের স্মরণে লাল ব্যাজ পরেন সব শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ‘লাল ব্যাজ’ ধারণ ও পতাকা হাতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমবেত হন। আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহত ও চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
কর্মসূচিতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহইয়া আখতার বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অভূতপূর্ব সংস্কারের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করবো। শিক্ষাক্ষেত্রে এর ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেবো।
পরে উপাচার্য অধ্যাপক আখতার সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের বইমুখী করার ওপর আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম এতো কম সময়ের মধ্যে দূর করা সম্ভব নয়। তবু আমরা রাত-দিন শ্রম দিয়ে একটা ভালো পরিবেশ আনার চেষ্টা করেছি। আজ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো।
প্রত্যেক বিভাগেই শুরু হয়েছে ক্লাস। শিক্ষার্থীরা বলছে, প্রাণ ফিরেছে দেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের এ সবুজ ক্যাম্পাসে। ক্লাসের পাশাপাশি অনেক বিভাগে শিক্ষকরা ক্লাস টেস্টও নিয়েছেন। তবে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি কিছু শঙ্কাও রয়েছে শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধ থাকায় সেশন জটে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটলসহ অন্যান্য সমস্যা নিরসনে প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে গত ১ জুলাই থেকে। পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি পালন কর্মসূচির কারণে ওইদিন থেকেই ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরদার হলে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।