আন্দোলন-সহিংসতার ধাক্কায় এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল হলেও এর মূল্যায়ন কীভাবে হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
গত ৩০ জুন শুরু হওয়া এইচএসি পরীক্ষা অর্ধেকের মতো শেষ হওয়ার পর তাতে বাধা পড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতিতে বাকি পরীক্ষাগুলো কয়েক দফা স্থগিতের পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরুর কথা থাকলেও পরীক্ষায় বসতে অনাগ্রহীরা মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ দেখালে অবশিষ্ট পারীক্ষাগুলো বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার।
এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে চাইলে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে আমার একার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। বোর্ডগুলো সিদ্ধান্ত নেবে। পরীক্ষার বিষয়ে আন্তশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটি বহাল থাকছে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এখন এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলে নিরাপদ পরিস্থিতি বহাল থাকবে কি না, প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা যাবে কি না, তাছাড়া এ পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি আছে। চেয়েছিলাম আরও বিশ্লেষণ করতে। কিন্তু আপনারা জানেন, যেসব ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত।
পরীক্ষার ফল কীভাবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, একটা রক্ষাকবচ আমার কাছে মনে হয়েছে, এসব পরীক্ষার্থী পুরো বছর পরীক্ষা দিয়েছে, টেস্ট-প্রিটেস্ট দিয়েছে। আমি সব কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবো, তারা যেন শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ের সব মূল্যায়নপত্র দেয়।
মূল্যায়ন বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের এক্সপার্টরা আছেন, তারা ভাবছেন। শিক্ষা বোর্ডগুলো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের কাছ থেকেও। এই সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলেছেন তিনি।
পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, কালকে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। এ সম্পর্কে আমি এখনো চিন্তাও করিনি। আমার মাথায় এটা ঢুকছে না এখন।
এসব শিক্ষার্থীর পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া নিয়েও কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা । তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে, সেটা আমাদের আওয়তায় নেই। তবে তারা যদি ভর্তি পরীক্ষার জন্য আরো যাচাই-বাছাই করতে চায়, সে সুযোগ তো রয়ে গেছে। যেহেতু এইচএসসির বাকি পরীক্ষাগুলো হচ্ছে না।
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দায়িত্ব ছাড়ার প্রেক্ষাপটে ওইসব প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা চলছে বলে জানান উপদেষ্টা।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগে যে সুবিধা ছিল, বিশেষ করে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের শিক্ষকদের একটা সংগঠন থাকে। সেখান থেকে টেনে একজনকে ভিসি বানিয়ে দেওয়া হতো। আমাদের ক্ষেত্রে তো সেই সুযোগ পাচ্ছি না। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষককে আমরা চিনি তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব এবং প্রশাসনিক দক্ষতার দিক থেকে যারা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এরকম শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ দেব। প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একত্রে নিয়োগ দিয়ে দেব ভাবছি।
তিনি আরো বলেন, দেশের বেসরকারি কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিলো। তাতে শিক্ষক নিয়োগে যে অনিয়ম হয়েছে সেটা ছিল পুঞ্জীভূত অনিয়ম। অত্যন্ত অসঙ্গত কারণে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এরকম হাজার হাজার অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। এগুলো নীতিগত সিদ্ধান্ত ছাড়া তো ঠিক করা যাবে না। তবে কথা হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে, বল প্রয়োগ করা যাবে না, ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত করা যাবে।