‘আপনাদের সাথে আজকে হয়তো দেখা হচ্ছে না। আমি এজন্য অত্যন্ত দু:খিত। আগামীতে নিশ্চয়ই আবার দেখা হবে। আমরা ইভেন্টটা আবার করবো। আশা করছি আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে আগামীতে’। গত ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থলের বড় পর্দায় দেখানো ভিডিওবার্তায় এভাবেই দৃঢ়তার সঙ্গে কথাগুলো বলতে শোনা যায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডসঙ্গীত তারকা শাফিন আহমেদকে।
দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কয়েকদিন পরই তিনিই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ভার্জিনিয়ার সেই হাসপাতালের বেডে বসে শাফিন আহমেদ ভক্তদের উদ্দেশ্যে তার জীবনের শেষ কথাগুলো বলেছিলেন সেই ভিডিওবার্তায়। ভার্জিনিয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শম্পা শ্রী শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ভিডিওবার্তা দেয়ার সময়ও তাকে দেখে তখনো মনে হয়নি তিনি এভাবে চলে যাবেন’।
তিনি বলেন, ‘এর আগে ভার্জিনিয়ায় একাত্তর ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মাইলস ব্যান্ডের ৪০ বছর পূর্তির একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। সেবার দলের সবাই আসলেও শাফিন আহমেদ আসতে পারেননি। এবার তিনি এলেন, কিন্তু গান শোনাতে পারলেন না। দু’বারই ভার্জিনিয়ার মানুষ বঞ্চিত হলো। আবার ফিরবেন বলে এবার তিনি একেবারেই চলে গেলেন। তার জন্য খুব কষ্ট অনুভব করছি। তার বিদেশী আত্মার শান্তি কামনা করছি’।
এদিকে মাইলস ব্যান্ড দলের অন্যতম ভোকাল শাফিন আহমেদের চলে যাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গণে। বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে) যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বপ্নবাজ নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে ২০ জুলাই একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল জনপ্রিয় এই শিল্পীর। সে অনুযায়ী ১৫ জুলাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছান। তবে অনুষ্ঠানের আগের দিন তিনি হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে এক পর্যায়ে তাকে লাইফসাপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বপ্নবাজ সংগঠনের সভাপতি পল্লব আনসারী বলেন, বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি এই শিল্পীর এমন চলে যাওয়ায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মূলত আমরা তাকে বিশেষ সম্মাননা জানানোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু অসুস্থ্যতার কারণে তিনি সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন নি। তবে শারীরিক যন্ত্রণা নিয়েও তিনি আমাদেরকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন। সেই ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে সবার উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করা হয়। তার এমন চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
পল্লব আনসারী বলেন, শাফিন আহমেদ এর ভাই হামিন আহমেদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার কথা থাকলেও, আসছেন না। দেশেও প্রয়াত শিল্পীর দাফনসহ অন্যান্য কাজে তার ব্যস্ততা রয়েছে। ফলে সব ধরণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমরাই তার মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। সব কিছু ঠিক থাকলে শনি কিংবা রোববার নিথর শাফিন আহমেদ মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।
যুক্তরাষ্ট্র সময় শুক্রবার (২৬ জুলাই) শুক্রবার দুপুর ২:৩০টায় ভার্জিনিয়ার দার আল-নূর ইসলামিক সেন্টারে শাফিন আহমেদের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। ে
শাফিন আহমেদ স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন। শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সংগীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্ত। এই পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই শাফিন আহমেদ গানের ভেতরেই বড় হন। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলসংগীত।