অত্যন্ত উঁচু মান এবং নিখুঁত হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ সব ভবন উড়িয়ে দেয়া হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে কিয়েভের বাসিন্দাদের নিরাপদ অবস্থানে থাকার পরামর্শও এসেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে।
কিছুক্ষণ আগেই বিবিসি জানিয়েছে, রাজধানী কিয়েভে কেন্দ্রীয় টেলিভিশন টাওয়ার কাছে বড় ধরনের এক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এতে টাওয়ার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অন্যদিকে, ক্রমশই কিয়েভের দিকে এগিয়ে আসছে রাশিয়ার বিশাল এক সামরিক বহর। উপগ্রহ চিত্র বলছে বহরটি কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে ব্যাপক মিসাইল হামলা চালিয়েছে রুশ সেনা। এতে জ্বলছে খারকিভের কেন্দ্রস্থল।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যোগ দিলে তাকে স্বাগত জানান মহাদেশটির নেতারা। এ সময় জেলেনস্কি দ্রুত ইউক্রেনকে ইইউ’তে নিতে আবারো আহবান জানান।
মঙ্গলবার রাতে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় রুশ হামলা প্রতিরোধে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, প্রমাণ করুন সঙ্কটের ওই মুহূর্তে আপনারা ইউক্রেনের পাশে রয়েছেন। এর আগে সকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ চেয়ে আবেদনে সই করেন জেলেনস্কি।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীর দিক থেকে রুশ সেনবাহিনী ধারণার চেয়েও শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন। রুশদের বেশ কিছু স্থাপনা ও শহর দখলের চেষ্টাকে প্রতিহত করার দাবিও করেছে ইউক্রেনের সেনারা।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রোববার বলেছেন, রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেইন অভিযানের জন্য বরাদ্দ তার মোট যুদ্ধশক্তির দুই-তৃতীয়াংশকে ব্যবহার করেছে; আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা প্রস্তুত রেখেছে।
মঙ্গলবার যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বড় শহরগুলোতে রুশ হামলা প্রবল হয়েছে। আকাশ থেকে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণের পাশাপাশি রুশ আর্মাড ডিভিশনগুলোর কয়েক হাজার ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি নতুন করে ঢুকে পড়েছে ইউক্রেনে।
৪০ মাইল দীর্ঘ রাশিয়ার সামরিক কনভয় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিয়ে এগিয়ে আসার খবর আগেই জানিয়েছিল পশ্চিমা গণমাধ্যম। এই বিশাল সামরিক বহর এগিয়ে আসার পথে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলের দিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি বলেছে, রাজধানী কিয়েভে নিরাপত্তা বিভাগের প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে। এসব সামরিক স্থাপনার কাছাকাছি এলাকা থেকে বেসামরিক লোকজনকে দ্রুত সরে যেতে বলা হয়েছে।
রুশ বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনের যেসব নাগরিক জাতীয়তাবাদীদের উসকানিতে তৎপর তাদের এবং কিয়েভের অন্য বাসিন্দা যারা এসব স্থাপনার কাছে বসবাস করছেন তাদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করছি।
অন্যদিকে মঙ্গলবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভের কেন্দ্রস্থল ফ্রিডম চত্বরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। হামলার পর অন্তত ১০ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও এক ডজন মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ফ্রিডম স্কয়ারে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করছে, এমন একটি ভিডিও টুইটারে পোস্ট করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্রে পুড়ে যাওয়া গাড়ি ও ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে।
রয়টার্স জানাচ্ছে, ইউক্রেনকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে ক্রমশ আরো ভেতরে এগোচ্ছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। রাজধানী কিয়েভের সীমানা পেরুচ্ছে রুশ সেনা। অন্য দিকে ইতিমধ্যে দখল হয়ে গেছে চেরনোবিল পারমানবিক কেন্দ্র। ইউক্রেনের খারসন দিয়েও ঢুকে পড়েছে রুশ সেনাদল।
রাজধানী কিয়েভে বিমান হামলার সতর্কতা হিসেবে বেজে উঠেছে সাইরেন। এদিকে ইউক্রেনে রুশ প্লেনের জন্য ‘নো ফ্লাই জোন’ তৈরির কথা বিবেচনা করতে পশ্চিমাদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ষষ্ঠ দিনেও এই প্রতিবেদন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ চলছিলো। খারকিভে পঞ্চমদিনে রাশিয়ার রকেট হামলায় মারা গেছে অন্তত ১১ জন সাধারণ নাগরিক। এই নিয়ে রুশ হামলায় ১৪ শিশুসহ মারা গেছে ৩৫২ জন ।
খারসন শহরেও হামলা শুরু করেছে রুশ সেনারা। খারসনের আঞ্চলিক প্রশাসন জানিয়েছে, রুশ বাহিনী শহরটি ঘিরে ফেলেছে। তবে এখনও দখল করতে পারেনি।এদিকে উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ শহরেও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে।
ইউক্রেনে বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ করেছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেন সেনাদের শক্ত প্রতিরোধের কারণে মুখে পড়েছে পুতিন বাহিনী। রাজধানী কিয়েভ, খারকিভ এবং চেরনিহিভ শহরের নিয়ন্ত্রণ এখনও ইউক্রেনের হাতেই রয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা বন্ধের জন্য তিনটি শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ৯০ মিনিটের ফোনালাপে পুতিন জানান, কেবল নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়ার বৈধ উদ্বেগ বিবেচনায় নিলেই ইউক্রেন সংকটের সমাধান সম্ভব।