ভারতে সমলিঙ্গ বিয়ে নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। গোটা বিষয়টি এখন দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে। সেই ধারায় সমলিঙ্গ বিয়ে নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত চেয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সমলিঙ্গ বিয়ে নিয়ে কেন্দ্রকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মতামত জানাতে হবে।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পি এস নরসিমহা এবং বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালার ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন হাই কোর্টে জমে থাকা ই সংক্রান্ত সব মামলা আগামী মার্চে শুনানি করবে সুপ্রিম কোর্ট।
মামলার আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টকেই মামলাগুলো শোনার আর্জি জানিয়েছিলেন। মামলার সব আবেদনকারীর নাম নথিভুক্ত করার জন্যও কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই বিষয়ে কেন্দ্রের মতামত জেনেই শুনানি করবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
গত বছর ২৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দুই সমকামী যুগলের করা দুই মামলা সম্পর্কে অবহিত হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করেন সুপ্রিয় চক্রবর্তী এবং অভয় ডাং। বস্তুত, তাঁরাই ভারতের প্রথম সমকামী যুবক, যারা বিয়ে করেছেন। এখন তারা বিয়ের স্বীকৃতি চেয়ে আদালতে গেছেন।
অন্যদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছরের সম্পর্কের পর পার্থ ফিরোজ মালহোত্রা এবং উদয় রাজ বিয়ে করেন। আদালতে ওই যুগল জানান, তাঁরা দুটি শিশুকে লালনপালন করছেন। কিন্তু যেহেতু তাঁদের বিয়ের কোনও আইনি স্বীকৃতি নেই, তাই আইনত শিশুদের বাবা-মা হতে পারছেন না।
আরেক মামলার দুই বাদি আমেরিকায় থাকাকালীন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন দুই সমকামী। দুজনেই জন্মসূত্রে হিন্দু। আমেরিকার আইন অনুযায়ী সেই বিয়ে বৈধ ছিল। ২০১০ সালে বিয়ে হয় তাদের। এরপর ভারতের অভিবাসন দপ্তরেও বিবাহ নিবন্ধনের জন্য গিয়েছিলেন যুগল।
কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ভারতীয় অভিবাসন আইন অনুযায়ী তাঁদের বিয়ে এখনও বৈধ নয়। সমকামী বিয়েকে বৈধ ঘোষণা করা হোক, এমন দাবি নিয়েই তাঁরা এবার মামলা দায়ের করলেন সুপ্রিম কোর্টে।
তাদের দাবি, ১৯৬৯ সালের বিদেশিদের বিবাহ আইন অনুযায়ী তাঁদের বিয়েকে বৈধ ঘোষণা করা হোক। তাদের বক্তব্য ছিল, বিষমকামীদের মতোই সমকামী বিয়েকেও বৈধ ঘোষণা করা হোক। কারণ পিটিশনকারী যুগল এলজিবিটিকিউ সমাজের দুই সদস্য।
আরও পড়ুন: স্বেচ্ছায় করোনা সংক্রমিত হচ্ছে চীনা তরুণরা
এই যুগল আবেদনে বলেছে, তাঁদের বিয়েকে বৈধ ঘোষণা না করায় ভারতীয় সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। জন্মসূত্রে হিন্দু হওয়ায় আবেদনে হিন্দু বিবাহ আইনের কথাও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, হিন্দু বিবাহ আইনের প্রাথমিক ধারাকেও লঙ্ঘন করছে এই অবৈধ ঘোষণা।
হিন্দু বিবাহ আইনে বলা হয়েছে, যে কোনও দুজন হিন্দুর মধ্যে বিয়ে বৈধ। আবেদনের কথায়, দুজন সমকামী হিন্দু বিয়ে করতে পারবেন না, এমন কথা আইনটির কোথাও বলা নেই। তাই হিন্দু বিবাহ আইনকেও এটি লঙ্ঘন করছে।
একাত্তর/এসজে