সামরিক নেতৃত্বের সমালোচনা করার পর তাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ইভান পপোভ।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রধান খবরের অনুষ্ঠানে পপোভের মন্তব্যের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক পত্রিকা বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। খবর: রয়টার্স।
মেজর জেনারেল ইভান পপোভ বলেন, ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তুলে ধরে শীর্ষ সামরিক নেতাদের ব্যর্থতাকে তিনি রুশ সেনাদের ‘পিঠে ছুরিকাঘাত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
২৪ জুন ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সংক্ষিপ্ত সশস্ত্র বিদ্রোহ ছিল কয়েক দশকের মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্রোহের পরও রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে দায়িত্বে বহাল রেখেছেন তিনি।
রাশিয়ার আইনপ্রণেতা আন্দ্রেই গুরুলিয়ভ প্রকাশিত এক অডিও বার্তায় ৫৮তম কম্বাইন্ড আর্মসের কমান্ডার মেজর জেনারেল ইভান পপোভ বলেছেন, রণক্ষেত্রে প্রকৃত পরিস্থিতি শীর্ষ সামরিক নেতাদের কাছে তুলে ধরার পর তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
পপোভ বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের প্রতিরক্ষা রেখা ভেদ করতে পারেনি। কিন্তু সিনিয়র কর্মকর্তারা পেছন থেকে তাদের আঘাত করেছেন, সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে তারা সেনাবাহিনীর শিরশ্ছেদ করেছেন।
পপোভের সামরিক ছদ্ম নাম বা কল সাইন ‘স্পার্টাকাস’। তিনি দক্ষিণ ইউক্রেনে রুশ সেনা ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন। ইউক্রেনীয় কামানের গোলাবর্ষণে রুশ সেনাদের হতাহতের বিষয়টি তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, শত্রুর হামলা মোকাবিলার মতো পর্যাপ্ত কামান ও গোয়েন্দা কার্যক্রম ছিল না।
এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনও মন্তব্য জানা যায়নি বা পপোভের অডিও বার্তার সঠিকতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। রুশ আইনপ্রণেতা গুরুলিয়ভ একজন কট্টরপন্থি সাবেক সেনা কমান্ডার। তিনি নিয়মিত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন।
এছাড়া অডিও বার্তাটি কখন রেকর্ড করা হয়েছে তাও অস্পষ্ট। পপোভ এখন কোথায় অবস্থান করছেন তাও জানা যায়নি। তাকে বরখাস্তের বিষয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও কিছু জানায়নি।
ওয়াগনারের বিদ্রোহের তিন সপ্তাহ পর যুদ্ধে পরীক্ষিত একজন জেনারেলের পক্ষ থেকে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের এমন সমালোচনা যদি সঠিক হয় তাহলে তা রুশ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে চলমান দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এমন সময় এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসছে যখন দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম স্থলযুদ্ধে লিপ্ত।
পপোভ ইস্যুতে রাশিয়ার সামরিক ব্লগারদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, পপোভের মন্তব্য প্রকাশ্য অবাধ্যতা। অন্যরা বলছেন, পপোভ কোনো বিদ্রোহী নন, তিনি একজন শ্রদ্ধাভাজন জেনারেল। যিনি শীর্ষ সামরিক নেতাদের রোষানলে পড়েছেন।
রুশ গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) সাবেক কর্মকর্তা ইগো গিরকিন বলেছেন, এটি বিপজ্জনক ধারা।
আরও পড়ুন: তিস্তায় ঘণ্টায় এক লাখ কিউসেক পানি ছাড়ছে ভারত
পপোভ বলেছেন, তার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। শীর্ষ কর্মকর্তারা হয়তো তার কাছ থেকে কোনো বিপদের আশঙ্কা করছেন। মাত্র এক দিনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি তার পরিণতির জন্য অপেক্ষা করছেন বলেও জানান পপোভ।
একাত্তর/জো