পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে দেশটির ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখেছেন নওয়াজ শরীফের কন্যা মরিয়ম নওয়াজ। এর আগে কোনও নারী পাকিস্তানের কোনও প্রদেশের প্রধান নির্বাচিত হননি। মারিয়মই প্রথম। একই প্রদেশেরই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তাঁর বাবা নওয়াজ শরীফও।
অর্থাৎ, বাবার পথেই হাঁটছেন তিনি। খুব বেশিদিন না হলেও, পাকিস্তানের রাজনীতিতে আসার পর থেকেই দেশটির রাজনীতিতে বেশ চর্চিত নাম মরিয়ম নওয়াজ। তবে এই পর্যায়ে আসতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক পথ। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তবেই আজকের পর্যায়ে এসেছেন তিনি।
কে এই মরিয়ম নওয়াজ, কি তার পরিচয়, কিভাবেই বা তার উত্থান? এমন সব প্রশ্নই এখন নেট দুনিয়ায় সবাই ঘুরে ফিরে জানতে চাইছেন। পাকিস্তানে মরিয়মই প্রথম নারী, যিনি কোনও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হলেন। এর মধ্য দিয়ে শরিফ পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের নেতা হিসেবে সাংবিধানিক পদ গ্রহণ করলেন।
মরিয়ম নওয়াজ বর্তমানে পিএমএল-এনের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বড় মেয়ে এবং শাহবাজ শরীফের ভাতিজি। তিনি পাঞ্জাব থেকে শরীফ পরিবারের চতুর্থ মুখ্যমন্ত্রী ও এমপি। একই সঙ্গে তিনি এই পরিবারের প্রথম নারী এমপিও।
১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের লাহোরে জন্ম নেন মরিয়ম। ৩৯ বছর বয়সে ২০১২ সালে প্রথম রাজনীতির মাঠে পা রাখেন তিনি। পরের বছরই পাকিস্তান নির্বাচনে পিএমএলএন-কে জয়ী করার দায়িত্ব বর্তে মরিয়মের কাঁধে। একই বছর তিনি প্রধানমন্ত্রীর যুব কর্মসূচির চেয়ারম্যানও নিযুক্ত হন।
তবে লাহোর হাইকোর্টে তাঁর নিয়োগ চ্যালেঞ্জের পর ২০১৪ সালে তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়ান করেন। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির জেরে তাকে সরকারি পদে অযোগ্য ঘোষণা করে। আদালতের রায়ে মরিয়ম অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে, দলের দাবি ছিল তিনি নির্দোষ।
২০২৪ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবার জাতীয় পরিষদ এবং পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে তিনি নির্বাচিত হন। পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য তার সংসদীয় আসন ছেড়ে দেন। এর আগে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মরিয়মের বাবা নওয়াজ, চাচা শাহবাজ ও ভাই হামজাও।
২০১৮ সালে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁর হলফনামায়, মরিয়ম তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ১৮৮ একর কৃষি জমির মালিক এবং একাধিক কোম্পানিতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তার নামে কোন গাড়ির নিবন্ধন নেই।
মরিয়ম নওয়াজ স্কুল জীবন কাটান লাহোরের নামকরা স্কুল 'কনভেন্ট অব জেসাস এন্ড ম্যারি স্কুলে। ডাক্তার হতে চাইতেন মরিয়ম, তাই তিনি লাহোরের কিং এডওয়ার্ড মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু ওখানে তার বেশিদিন মন টেকেনি; পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৯২ সালে মরিয়ম নওয়াজের বয়স যখন ১৯, তখন পিতা নওয়াজ শরীফ তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন সফদর আওয়ানের সঙ্গে বিয়ে দেন, বিয়ের পরে সফদর সামরিক চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এই দম্পতির দুই কন্যা এবং এক ছেলে সন্তান আছে।