সেকশন

সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
 

প্রাচীন রহস্য লুকিয়ে আছে যে আট মমিতে 

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম

মৃত্যুর পর কী আছে? আদৌ কিছু আছে নাকি, মৃত্যু শুধুই মানব জীবনের শেষ ধাপ। এই প্রশ্ন দীর্ঘকাল ধরে ভাবিয়ে আসছে। তবে মৃত্যুর পরও জীবনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কতই না পদক্ষেপ নিয়েছে মানুষ। আর এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মরদেহ সংরক্ষণের চেষ্টা।

প্রাচীন মিশর ও ইনকা সভ্যতায়, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান ও পরকাল সম্পর্কে বিশ্বাসীদের মরদেহ সংরক্ষণ শুরু হয়। আর ইচ্ছাকৃতভাবে দেহ সংরক্ষণের প্রথাকে আজ আমরা মমি বলে চিনি।

যদিও মমি বলতে আমরা প্রাচীন মিশরের মৃতদেহ সংরক্ষণের পদ্ধতিকে বুঝি। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল যে, পৃথিবী সবচেয়ে পুরান মমি মিশরে পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এমন মমিও পেয়েছে যা প্রাচীন মিশরের মমির থেকে তিন হাজার ৫০০ বছর পুরানো এবং এরি সঙ্গে আমাদের মমি নিয়ে ধারণাও পাল্টে গেছে।

ধন-সম্পদ ও ব্যক্তিগত জিনিস দিয়ে সমাহিত মমি সারা বিশ্বে পাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে, এই মমিগুলি প্রাচীন সংস্কৃতির বিশ্বাস ও অনুশীলনের বিস্তারিত ধারণা দেয়। মমি ও তাদের সাথে সমাধিস্থ করা জিনিসগুলি প্রকাশ করে যে, তারা কোন পণ্য ও ভাবনাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এখন বিজ্ঞানীরা এই মমির গবেষণা করে সেই সময়ের মানুষদের জীবন ও মৃত্যুর রহস বের করছে।

ফারাও তুতেনখামেন থেকে ইনকা শিশু, এই আটটি বিখ্যাত মমি তাদের মৃত্যুর রহস্য আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।

ওৎজি দ্য আইসম্যানঃ

১৯৯১ সালে আল্পস পর্বতে একটি মমি আবিষ্কার করা হয়, যা ওৎজি দ্য আইসম্যান নামে পরিচিত। এই মমিটিকে পশ্চিম অস্ট্রিয়ার কাছের ওটজতাল উপত্যকার (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ৫৩০ ফুট উঁচু) গিরিপথে খুঁজে পাওয়া যায়।

ওৎজির মৃতদেহটি এতো ভালো করে সংরক্ষিত ছিলো যে, তাকে খুঁজে পাওয়ার পরে অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে মনে করেছিলেন তিনি একজন আধুনিক সময়ের পর্বতারোহী।

পরে তার ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, তিনি পাঁচ হাজার ৩০০ বছর আগে তাম্রযুগের মানুষ ছিলেন। ওৎজি যখন বেঁচে ছিলেন, তখন ইউরোপে প্রথম সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের বিকাশের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।  

২০১৩ সালে গবেষণার মাধ্যমে ওৎজির মৃত্যুর রহস্য জানা গেছে। তিনি তীর বিদ্ধ হওয়ার পর মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যান।

ওৎজির মমি আবিষ্কারের পরে ইউরোপে তাম্রযুগের মানুষদের জীবন সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা যায়। তার জিন দেখায় যে, তিনি মধ্য ইউরোপের অধিবাসী ছিলেন এবং তার পেটের বিষয়বস্তু দেখায় যে মৃত্যুর আগে তিনি এক প্রজাতি বন্য ছাগল আইবেক্সের মাংস খেয়েছিলেন।

তার বয়স ৪০-এর মাঝামাঝি ছিলো এবং সে সময় তিনি আর্থরাইটিস, ধমনি সংকীর্ণ ও কৃমির রোগে ভুগছিলেন। তবে সম্ভবত তিনি ব্যথার চিকিৎসার জন্য আকুপাংচার ও ঔষধি ভেষজ ব্যবহার করেছিলেন।

মমিটি থেকে আরো জানা যাচ্ছে যে, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে সরঞ্জামগুলিকে ধারালো করেছিলেন তিনি।  কিন্তু এটি লড়াই না নিজের কাজের জন্য করা হয়েছিলো, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

টোলুন্ড ম্যানঃ

টোলুন্ড ম্যান নামে পরিচিত ডেনমার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় মমিটি পাওয়া যায় ১৯৪০ সালে। যদিও তার মৃত্যু হয়েছিলো গলাই ফাঁস দেওয়ার কারণে।  কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি তাকে কি হত্যা করা হয়েছে নাকি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মানব বলি হিসাবে মেরে ফেলা হয়েছিলো।

ডেনমার্কের মিউজিয়াম সিল্কবার্গের মতে, টোলুন্ড ম্যানের মৃত্যু একটি আনুষ্ঠানিক বলিদানের অংশ ছিলো। কারণ তার মৃত্যুর পর, খুব যত্নের সঙ্গে তার মুখ ও চোখ বন্ধ করা হয়েছিলো। এছাড়াও সে সময়ে বেশিরভাগ লোককে দাহ করা হতো। কিন্তু টোলুন্ড ম্যানের মরদেহ দাফন করা হয়েছিল এবং এটি ‘মানব বলিদান’ তত্ত্বের একটি বড় প্রমাণ দেয়।

চমৎকারভাবে সংরক্ষিত এই মমিটি প্রায় ৪০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। গবেষকরা টোলুন্ড ম্যানের দেহ বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছেন যে, মৃত্যুর আগে তার বয়স হয়েছিলো ৩০ থেকে ৪০ বছর। তিনি লম্বায় কমপক্ষে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি ছিলেন। তার শরীর মৃত্যুর পর কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। আর মৃত্যুর আগে তিনি শেষ বারের মতো বার্লির পোরিজ ও মাছ খেয়েছিলেন।

সিল্কবার্গে টোলুন্ড ম্যানের মমিটি এখন আছে। সেখানে দেখা যায় তিনি একটি ভেড়ার চামড়ার টুপি এবং চামড়ার বেল্ট পরেছিলেন। আর এখনও গলায় সেই দড়িটি আছে, যা দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়েছিলো।

রাজা তুতেনখামেনঃ

সম্ভবত, এই পৃথিবীতে কোনো মমিই মিশরের রাজা তুতেনখামেনের থেকে বেশি বিখ্যাত নয়। তরুণ এই ফারাও তিন হাজার বছর আগে মিশর শাসন করেছেন। রাজা তুত মাত্র ৯ বছর বয়সে মিশরের ‘ফারাও’ হন এবং ১০ বছর রাজত্ব করার পর ১৯ বছর বয়সে মারা যান।

ইতিহাসবিদদের ধারণা, তুতেনখামেনের জন্ম ১৩৪১ খ্রিষ্টপূর্ব এবং মৃত্যু ১৩২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। সেই সময় মিশর একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো।

১৯২২ সালে ৪ নভেম্বর তার সমাধিটি ‘ভ্যালি অব কিংস’ থেকে খুঁজে পাওয়া যায়। তুতের সমাধি খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বিশ্বব্যাপি আলোজিত ঘটনা হয়ে ওঠা। কারণ এই রাজকীয় সমাধিতে তখন পর্যন্ত কোনো লুটপাট হয়নি। ওই কিশোর ফেরাউনের মমিটি তখনও স্বর্ণে তৈরি তিনটি কফিনের ভিতরে ছিলো।  

তুতের চকচকে সমাধিটি প্রাচীন মিশরীয় ঐতিহ্যের একটি স্পষ্ট ধারণা বহন করে। তার দেহ থেকে পাওয়া ডিএনএ পিতামাতার সম্পর্কের রহস্যকে উদ্ঘাটন করেছে। রাজা তুতের পিতামাতা সম্পর্কে ভাইবোন ছিলেন। ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পারে, তুতের বাবা ছিলেন ফারাও আখেনাতেন। কিন্তু তুতের মার নাম এখনো অজানা রয়ে গেছে।

তুতেনখামেননের মমি তেকে জানা যায়, ফারাওয়ের ম্যালেরিয়া ও পায়ের একটি বিরল হাড়ের ব্যাধি ছিলো যা তার চলাফেরা কঠিন করে তুলেছিলো। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, তার মৃত্যু ম্যালেরিয়া বা অন্য সংক্রমণের কারণে হয়েছে।

জিন ঝুইঃ

মমি বলতে সাধারণত শুকনো ও খরখরে মৃতদেহের কথা মনে হলেও জিন ঝুইয়েরটা মোটেও তেমন না। ‘লেডি ডাই’ নামে পরিচিত জিন ঝুইয়ের এই মমি চমৎকার ভাবে সংরক্ষিত ছিলো।

চীনের হান রাজবংশের সময়ের জিন ঝুইয়ের মমি আবিষ্কৃত হয়েছিলো ১৯৭১ সালে। তার সমাধি অক্সিজেন-মুক্ত পরিবেশে থাকায় কোনো ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারেনি। সমাধিটি ‘এম্বলিং’ রাসায়নিকের মধ্যে থাকার কারণে খুব ভালোভাবে জিন ঝুইয়ের দেহ সংরক্ষিত হয়ে ছিলো। মমি খুঁজে পাওয়ার পর দেখা যায়, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি তখনও নমনীয়, তক নরম ও মাথা ভরা চুল।  

প্রায় দুই হাজার ২০০ বছর আগে চীনের হান রাজবংশের শাসনকালে ২১৭ খ্রিস্টপূর্বে জিন ঝুইয়ের জন্ম। তিনি ১৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মারা যান। তার সমাধিতে এক হাজারেরও বেশি মূল্যবান শিল্পকর্ম ছিলো, যার মধ্যে ছিলো- জমকালো বার্নিশের খাবারের সেট, মেকআপ, তার কর্মচারীদের ১৬২টি খোদাই করা কাঠের মূর্তি, বাদ্যযন্ত্র ও চমৎকারভাবে আঁকা সিল্ক। এর থেকে বোঝা যায় জিন ঝুই খুব সম্পদশালী ছিলেন।

আর্কিওলজি ম্যাগাজিন অনুসারে, বিজ্ঞানীরা জিন ঝুইয়ের মমির ওপর গবেষণার করে পেয়েছেন যে, ৫০ বছর বয়সে হৃদরোগে মারা যান তিনি। এখন তার মমি চীনের হুনান মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে।

চিনচোরোদের মমিঃ

আধুনিক চিলিতে পাওয়া চিনচোরোদের মমি বিশ্বের প্রাচীনতম মমি হিসাবে পরিচিত। মানব নির্মিত এই মমি গুলির বয়স সাত হাজার বছরেরও বেশি যা প্রাচীন মিশরীয় মমিগুলির থেকে দুই হাজার বছর আগে করা হয়েছে।

আর্কিওলজি ম্যাগাজিন অনুসারে, এই মমিগুলিকে প্রাচীন মিশরের যে কোনও রাজ পরিবারের সদস্যদের মতোই যত্ন সহকারে প্রস্তুত করা হয়েছিলো।

চিনচোরোদের মমি করার পূর্বে তাদের শরীর থেকে অঙ্গগুলি সরানো হয় এবং তাদের পেশীগুলি থেকে হাড় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। তারপর উদ্ভিদের পদার্থ ও কাদামাটি দিয়ে পুনরায় তাদের শরীর একত্রিত করা হয়। সারা শরীরে কালো বা লাল রং দিয়ে আঁকা হতো। বিস্তৃত মানুষের চুলের উইগ এবং ভাস্কর্যযুক্ত মাটির মুখোশের সঙ্গে শেষ হয় চিনচোরোদের শেষকৃত্য।

চিনচোরোরা আতাকামা মরুভূমির উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে গোষ্ঠী ছিলো। এই গোষ্ঠীটি কোন লিখিত রেকর্ড রেখে যায়নি। তাই তাদের এই মৃতদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি তাদের বিশ্বাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দেয়।

চিনচোরোরা পদমর্যাদা নির্বিশেষে সবাইকে মমি করতো এমনকি মৃত শিশুদেরও। তাদের ধারণা ছিলো মমি হিসাবে তারা দ্বিতীয়বার জীবনকে উপভোগ করতে পারবে।

দ্বিতীয় রামেসিসঃ

দ্বিতীয় রামেসিস বা রামেসিস দ্য গ্রেট নামেও পরিচিত এই ফারাও ১৩০৩ থেকে ১২১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ৬৮ বছর মিশর শাসন করেছিলেন। জীবদ্দশায় তিনি নতুন অঞ্চল সুরক্ষিত করার জন্য সামরিক অভিযানের তদারকি এবং নীল নদের তীরে বিস্তৃত প্রকল্পে হাতে নিয়েছিলেন। এি প্রকল্পের মধ্যে একটি বিশাল মন্দির রয়েছে, যা এখন রামেসিয়াম নামে পরিচিত।

আশ্চর্যের বিষয় হলো রামেসিসের ৮৩ টন গ্রানাইট মূর্তি সহ তার রাজত্বের অনেক নিদর্শন এখনও টিকে আছে।

যদিও রামেসিসের মমি আধুনিক যুগে এখনও টিকে আছে কিন্তু কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ১১ শতকের দিকে মিশরের নতুন অধিপতিরা সাম্রাজ্যের (১৫৫০-১০৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বিস্তার শুরু করে। সে সময় পুরোহিতরা লুটেরাদের হাত থেকে রাজ পরিবারের মমিগুলো রক্ষা করার জন্য তাদেরকে স্থানান্তরিত করে।

কিন্তু সেটি শুধু ছিলো নামমাত্র। বাস্তবে পুরোহিতরা মমিগুলোর সঙ্গে থাকা স্বর্ণ ও কাঁচামালের জন্য এই সমাধিগুলিকে স্থানান্তর করতে চেয়েছিলো। মিশরের আমেরিকান রিসার্চ সেন্টার অনুসারে, সেই সময় এই সব বস্তুর সরবরাহ খুব কম ছিলো। এর ফলে মিশরের পুরোহিতরাও রাজপরিবারের মমিগুলোকে লুটপাট করা শুরু করে ছিলো।

১৮৮১ সালে দেইর এল-বাহারিতে দ্বিতীয় রামেসিস মমিটি পুনরায় আবিষ্কার করা হয়, তখন দেখা যায় সেটি একটি খুব সাধারণ কফিনে রাখা হয়েছিলো। দ্বিতীয় রামেসিসেকে যে দীর্ঘ লিনেন কাপড় দিয়ে মোড়ানো হয়েছিলো, সেখানে তার সম্পর্কে অনেক বর্ণনা ছিলো।

দ্বিতীয় রামেসিস ছয় ফুট লম্বা ছিলেন এবং দীর্ঘদিন জীবিত ছিলেন। প্রায় ৯০ বছরে বয়সে মারা যান। জীবদ্দশায় ১৪০ সন্তানের বাবা হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে পুত্র ৮০ জন ও ৬০ জন কন্যা।

এই ফারাওয়ের হাড়ের সমস্যা ছিলো। যে কারণে তার মেরুদণ্ডের কাছাকাছি লিগামেন্টগুলি শক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় রামেসিসের মমিটি এখন মিশরের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইজিপসিয়ান সিভিলায়জেসনে রয়েছে।  

সাইবেরিয়ান আইস মেডেনঃ

সাইবেরিয়ান আইস মেডেন সম্ভবত নিজের সময়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতাপশালী নারী ছিলেন, যিনি প্রাচীন পাজিরিক সংস্কৃতি ও সাইবেরিয়ার বৃহত্তর সিথিয়ান সংস্কৃতির সদস্য। তার বসবাস ছিলো খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে।

১৯৯৩ সালে রাশিয়ার আলতাই প্রজাতন্ত্রে এই সাইবেরিয়ান আইস মেডেনের সমাধি আবিষ্কৃত হয়। একটি বিশাল লার্চ কাঠের কফিনে তকে সমাহিত করা হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় বলি দেওয়া ছয়টি ঘোড়া।

উকোক প্রিন্সেস নামেও পরিচিত ছিলেন আইস মেডেন। তিনি সম্ভবত ২৫ বছর বয়সে মারা যান। তার মরদেহ পিট দিয়ে সুগন্ধি করা হয়েছিলো এবং দাফনের আগে মগজ ও চোখ বের করে ফেলা হয়েছিলো। আর খালি চোখে পশুর পশম ভরে দেওয়া হয়েছিলো।

মেডেনের শরীরে সাজানো ছিলো সোনার ধাতুপট্টাবৃত খোদাই করা তিন ফুট-লম্বা একটি হেডড্রেস দিয়ে। তাকে পরানো হয়েছিলো লাল, মেরুন ও হলুদ রঙের পশম ও উটের চুলের পোশাক। সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয় হচ্ছে, তার শরীরে থাকা ট্যাটু যা এখনও এতো স্পষ্ট যে, তা হরিণের মাথা, প্যান্থার, গ্রিফিনের ঠোঁট, লাফানো হরিণ আর ফুলের ডালের বিবরণ দেয়।

মমিটি পাজিরিক সম্প্রদায় সম্পর্কে অনেক আশ্চর্যজনক তথ্য প্রকাশ করে। মমি থেকে পাওয়া তথ্য এই ধারণা দেয় যে, পাজিরিকরা ষষ্ঠ থেকে তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্ব শতাব্দীতে বসবাস করতেন। আইস মেডেনের ব্লাউজটি বন্য সিল্কের তৈরি ছিলো, যা প্রায় দুই হাজার চার শত বছর আগে ভারতের সঙ্গে সাইবেরিয়ার বাণিজ্য পথকে ইঙ্গিত করে।

ইনকা শিশুঃ

আর্জেন্টিনার লুল্লাইলাকো সমাধিস্থলে তিনটি ইনকা শিশুর মমি পাওয়া গেছে, যাদেরকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বলি দেওয়া হয়েছিলো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এদেরকে পৃথিবীর সব থেকে ভালো সংরক্ষিত মমি হিসাবে বিবেচনা করেন। এই তিন শিশুকে গবেষকরা ‘লা ডোনসেলা (কুমারী)’, ‘লা নিনা দেল রায়ো (আলোকিত মেয়ে)’ ও ‘এল নিনো (ছেলে)’ সম্বোধন করে।

লা ডোনসেলা বা কুমারী নামে এই শিশুটির মৃত্যুর সময় বয়স ছিলো ১৫ বছর। লা নিনা দেল রায়ো একটি ছয় বছর বয়সী মেয়ে ছিলো। তার মমিটিতে বাজ পড়েছিলো গবেষকরা তাকে আলোকিত মেয়ে বলে অভিহিত করেন। আর এল নিনো নামে ছেলেটির মৃত্যুর আগে বয়স ছিলো মাত্র চার বা পাঁচ বছর।

আর্জেন্টিনার আগ্নেয়গিরি লুল্লাইলাকোর ২২ হাজার এক শত ফুট উঁচু চূড়ার কাছে একটি মন্দিরের মধ্যে সমাধিস্থ করা তিনটি শিশুকে। ১৯৯৯ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই তিনটি সমাধি আবিষ্কার করেন।

এই শিশুদেরকে ধারাবাহিকভাবে কোকা পাতা (যা থেকে কোকেন পাওয়া হয়) এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় দেওয়া হতো। শিশুরা যেনো আচার-অনুষ্ঠান পালনে কোনো প্রতিবাদ না করতে পারে, সেকারণেই তাদেরকে নিয়মিত মাদক পান করানো হতো।

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, সবচেয়ে বড় কুমারী শিশুটিকে বেশি পরিমাণে কোকো পাতা দেওয়া হতো। ইনকা সাম্রাজ্যের শীর্ষ সময়ে কোকা পাতা অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত পদার্থ ছিলো, শিশুদের বলি দেওয়ার সময়ই শুধু এটির প্রকাশ্য ব্যবহার হতো।

কুমারী শিশুর সঙ্গে থাকা অন্য দুই শিশুর মরদেহকে বেশি যত্ন দেওয়া হয়নি। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মূলে ছিলো কুমারী শিশুটি। ধারণা করা হয়, এই আচারের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর কুমারী শিশুটির অবস্থার পরিবর্তন হয় এবং তিনি একজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন ইনকা সমাজে। আর ওই দুই শিশুরা তার সেবার জন্য নিযুক্ত করা ছিলো।

২০০৭ সাল থেকে মমিগুলোকে আর্জেন্টিনার সাল্টা শহরে মিউজিয়াম অব হাই অল্টিচুড আর্কিওলজি জাদুঘরে রাখা আছে।

আরআর/আরবি
আমাজনের সবুজ গাছপালার মধ্যে হাজার হাজার বছর ধরে লুকিয়ে রয়েছে এক বিশাল প্রাচীন শহর। জঙ্গলের গভীরে দুই হাজার বছরের পুরোনো হারিয়ে যাওয়া এমন একাধিক শহর খুঁজে পেয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
পৃথিবী নামের এই গ্রহ জন্মলগ্ন থেকেই নানা রহস্যে ঘেরা। রহস্যের উদঘাটন করেই মানব সভ্যতা এগিয়ে চলছে। কিন্তু এমনও অনেক রহস্য এই গ্রহের বুকে রয়েছে যার সমাধান এখনও হয়নি। সে রকমই এক রহস্য মেক্সিকোর...
আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর আগে স্পেনে মানুষ মাদক সেবন করতো বলে নতুন একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মেনোর্কায় প্রাচীন মানব সভ্যতার সদস্যরা গাছপালা এবং ঝোপঝাড় থেকে প্রাপ্ত মাদক...
দক্ষিণ মিশরের প্রাচীন শহর অ্যাবিডোসে ফারাও রাজা দ্বিতীয় রামেসিসের মন্দিরে টলেমাইক যুগের অন্তত দুই হাজার ভেড়ার মাথার মমি এবং একটি প্রাচীন স্থাপনার সন্ধান পাওয়া গেছে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির একদল...
কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির ১৬ নেতা পদত্যাগ করেছেন।
নাটোরে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং তার স্ত্রী নাটোর-২ আসনের ২০১৮ সালের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন...
ঝিনাইদহে মাছ বিক্রি নিয়ে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজধানীর ভাটারা থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে। রোববার (১৮ মে) রাতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
লোডিং...
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত