আমাজনের সবুজ গাছপালার মধ্যে হাজার হাজার বছর ধরে লুকিয়ে রয়েছে এক বিশাল প্রাচীন শহর। জঙ্গলের গভীরে দুই হাজার বছরের পুরোনো হারিয়ে যাওয়া এমন একাধিক শহর খুঁজে পেয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
তাদের মতে, হাজার বছর পর্যন্ত মানুষ সেখানে বসবাস করেছিল। বিবিসির এক প্রতিবেদন জানানো হয়েছে এসব তথ্য।
ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা পণ্ডিতরা আমাজনীয় সংস্কৃতিকে আদিম এবং যাযাবর হিসেবে চিন্তা করতো। তাদের মতে আমাজনের মানুষরা শুধুই সাধারণ বসতি গড়ে তুলতে সক্ষম ছিল।
১৯৮০’র দশকে এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে শুরু হয় যখন প্রত্নতাত্ত্বিকরা আমাজন নদীর তীর ধরে কালো মাটির পুরু স্তর খুঁজে পায়। তারপরেও, গবেষকরা ২০২০’ র দশকে এগুলি উৎস নিয়ে বিতর্ক করে৷
কিন্তু, এ প্রাচীন শহরটি আমাজনে বসবাসকারী মানুষের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের পূর্ববর্তী ধারণার বদলে দেয়।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের তদন্ত পরিচালক অধ্যাপক স্টিফেন রোস্টেইন এ শহরটির প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি জানান, এটি অ্যামাজনের সবচেয়ে পুরানো সভ্যতা। যেকোনো সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের একটি ইউরোকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তবে এই সন্ধান দেখায় যে, আমাদের সভ্যতা সম্পর্কে আগের ধারণার পরিবর্তন করতে হবে।
এ শহরটিতে এক সময়ে কত লোক বসবাস করতো, তা সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন। তবে গবেষকরা বলছেন, লাখ না হলেও হাজার দশেকের বেশি মানুষ সেখানে থাকতো।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা ৩০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত যেকোনো আবাসিক এলাকার অনুরূপ অনেকগুলো বাড়ি খুঁজে পায়। তারা বিশ্বাস করে যে, এর মধ্যে বেশকিছু বাড়ি আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
সর্বশেষ অনুসন্ধানে পাওয়া ১৫টি সাইটের মধ্যে মোট ছয় হাজার অবকাঠামো পাওয়া গেছে এবং এর সবগুলো রাস্তার মাধ্যমে সংযুক্ত। এ থেকে ধারণা করা যায়, সমাজটি সুসংগঠিত ছিলো।
আরও পাওয়া যায় খাদ ও অবরুদ্ধ রাস্তা, যা প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করতো।
রোস্টেইনের দল আগেও এই উপত্যকায় খনন করেছিল এবং মেঝে, চুলা, বিশাল ঘড়া ও শানপাথর পেয়েছিলো। মৃৎপাত্রে পাওয়া শস্যের বিশ্লেষণে জানা যায়, এ প্রাচীন সভ্যতার মানুষ ভুট্টা, কাসাভা ও মিষ্টি আলু খেতো। গবেষকরা এমনকি প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন যে, আমাজনীয়রা বিয়ারও তৈরি করেছিলো।