হ্যাকিং। বুদ্ধিমান ও মেধাবীদের ভয়ঙ্কর জগত। প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটভিত্তিক আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির নাম হ্যাকিং। আর এই কাজটি যারা করেন তাদের বলা হয় হ্যাকার। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে এই হ্যাকাররা খালি করে ফেলতে পারেন ব্যাংকের টাকা থেকে শুরু করে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যও।
হ্যাকিং আর হ্যাকারদের সামাল দিতে কিংবা তাদের হামলা থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন লাখ কোটি টাকা ব্যয় করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বলা হচ্ছে, বিশ্বের অন্ধকার জগতের কারবারে এখন সবার চেয়ে এগিয়ে হ্যাকিং, যা প্রতি বছর কমপক্ষে ১৫ শতাংশ হারেই বেড়ে চলছে। সব দেশেই হ্যাকারদের এখন বাড় বাড়ন্ত।
বিশ্বের দেশে দেশে গোপনে গড়ে উঠছে হ্যাকিং প্রতিষ্ঠান। যেখানে শত শত কম্পিউটার প্রোগ্রামার ভালো কাজ ছেড়ে এই অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়েছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে এমন সব রাঘব বোয়ালরা জড়িত, যাদের ক্ষমতা অপরিসীম। যে কোন দেশের সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখে।
সাইবার মাফিয়াদের কবলে সর্বশান্ত হচ্ছে বিভিন্ন দেশের মেধাবী ছেলেরা। অতিরিক্ত আয়ের প্রলোভনে পা দিয়ে জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর অপরাধে। এমনই এক ভয়ঙ্কর খবর জানিয়েছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো। বলা হয়েছে, কম্বোডিয়ার সাইবার মাফিয়াদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন পাঁচ হাজার ভারতীয়।
কম্বোডিয়ায় ভারতীয় দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে৷ এ পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ' জনকে উদ্ধার করে ভারত ফেরত পাঠানো হয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বাকিদের উদ্ধারে কাজ চলছে।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কম্বোডিয়ায় প্রায় পাঁচ হাজার ভারতীয় আটকে পড়েছেন এবং তারা নিজ দেশের মানুষদের সঙ্গেই সাইবার জালিয়াতি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই খবরের প্রতিক্রিয়া জানাতে এক বিবৃতিতে জয়সওয়াল বলেন, দু’দেশ মিলে দায়ীদের দমনে কাজ করে যাচ্ছি।
মুখপাত্র বলেন, ভারত সরকার ও কম্বোডিয়ায় তার দূতাবাস প্রবাসী ভারতীয়দের এই ধরনের কেলেঙ্কারি সম্পর্কে অবহিত করে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বলপূর্বক তাদের দিয়ে মারাত্মক সাইবার অপরাধ করানো হচ্ছে। রাখা হয়েছে কার্যত ক্রীতদাস করে।
জানা গেছে, ডেটা এন্ট্রির কাজ দেয়ার টোপ দিয়ে প্রচুর ভারতীয় নাগরিককে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পৌঁছোবার পরই তাঁদের থেকে কেড়ে নেওয়া হয় পার্সপোর্ট। এরপর তাঁদেরকে দিয়ে জোর করে ভারতীয় নাগরিকদের উপরেই সাইবার হানার কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এভাবে গত ছ’মাসে ভারতীয়দের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কম্বোডিয়া থেকে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম। কাজের টোপ দিয়ে যে সব ভারতীয়কে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা।
সম্প্রতি কম্বোডিয়া থেকে দেশে ফিরতে পেরেছেন সেখানে আটকে থাকা বেঙ্গালুরুর তিন বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে এক জনের নাম স্টিফেন। তিনি জানিয়েছেন, রাম বাবু নামে অন্ধ্রপ্রদেশের এক বাসিন্দা কম্বোডিয়ায় আটকে রয়েছেন। বাকি কাউকে তিনি চেনেন না।
স্টিফেন আরও জানিয়েছেন, ডেটা এন্ট্রির কাজে লোক লাগবে বলে তাকে কম্বোডিয়া পাঠান মেঙ্গালুরুর এক ব্যক্তি। ওখানে তাঁর ইন্টারভিউ নেয়া হয়। সেখানে টাইপিং স্পিড দেখা হয় তার। করা হয় ছোটখাট প্রশ্নও। কয়েক দিন পরে তাঁকে বলা হয়, ভারতীয়ের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে তালিকা বানানোই হল তাঁর কাজ।
যাদের সাইবার প্রতারণার ফাঁদে ফেলা সহজ হবে, এমন সব ভারতীয়কে সবার আগে ফাঁসানো হতো বলে জানিয়েছেন স্টিফেন। কম্বোডিয়ায় বসে গোটা চক্রটা যারা চালাত, তারা চীনা বলে দাবি করেছেন স্টিফেন। চীনাদের বিভিন্ন নির্দেশ ইংরেজিতে তাঁদের কাছে অনুবাদ করে দিতো মালয়েশিয়ার এক নাগরিক।
গত বছর সাইবার প্রতারণার সিন্ডিকেট ফাঁস করে আট জনকে গ্রেপ্তার করে রৌরকেলা পুলিশ। সে তালিকায় থাকা দু’জনকে সম্প্রতি আটক করা হয়েছে হায়দারাবাদ বিমানবন্দর থেকে। কম্বোডিয়া থেকে দেশে ফেরার পরই তাদের আটক করা হয় বলে খবর। এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর সব তথ্য।
আটক দু’জনের নাম হরিশ কুরোপতি এবং নাগা বেঙ্কট সৌজন্য কুরোপতি। উল্লেখ্য, শুধু কম্বোডিয়া নয়, গত এক বছরে মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং আরও কিছু দেশে একইভাবে ভারতীয় নাগরিকদের লক্ষ্য করা হচ্ছে এবং প্রতারণার ফাঁদে জড়ানো হচ্ছে।