দুষ্টু রাষ্ট্র ইসরাইলের ভূখন্ডে, ইরানের সরাসরি হামলায় পশ্চিমাদের- চক্ষু চড়াকগাছ। ইরানকে এতোদিন তারা শুধু হুমকি হিসাবেই দেখে আসছে। ইরানও দীর্ঘদিন ধরে সংযম দেখিয়ে আসছে। কিন্তু ইসরাইল দিনে দিনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠায় আর চুপ থাকতে পারেনি। ইসরাইলের হামলায় নিজ দেশের শীর্ষ সেনা কর্তাদের হারানোর পর চুপ থাকেনি তেহরান। সরাসরি প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় দেশটি।
সেই ঘটনার পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইসরাইল। তেল আবিব জানায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে ইসরাইল। এ হামলার অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে ইরানের পারমাণবিক চুল্লি ও পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রগুলো। বার্ত সংস্থা রয়টার্স বলছে, এমন আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থাও। তবে বিষয়টি এতো সহজ হবে না এই যাত্রায়, কারণ এই ইরান আর সেই ইরান নেই।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইরান গেলো চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের অর্থেই ঢেলে সাজিয়েছে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ইসরাইল ও তাদের দোসর পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইরান ক্ষেপনাস্ত্র ও ড্রোনের বিশাল সম্ভার গড়ে তুলেছে তিল তিল করে। ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র ভান্ডারের সঠিক চিত্র নেই কারো কাছেই। কারণে, এই প্রকল্পটি সর্বোচ্চ গোপনীয়তারা রেখেছে দেশটির কর্তারা।
তবে পশ্চিমাদের ধারণা, ইরানের কাছে যেসব মাঝারি ও দূলপাল্লার মিসাইল রয়েছে সেগুলোর সক্ষমতাকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। ইরানের হাতে রয়েছে এমন সব ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল বা আইসিবিএম যা পরমাণু বোমা বহনে সম্ভব। পশ্চিমা হিসাবেই, ইরানের কাছে রয়েছে নয় ধরনের মিসাইল। এরমধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছেন শাহেদ সিরিজের গুলো; এগুলোর মারণ ক্ষমতা বিষ্ময়কর।
শুধু মিসাইলই নয়, শক্রুর আক্রমণ মোকাবেলায় ইরানেরও রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যার কথা এতোদিন জানা না গেলেও, রোববারে ইসরাইলে হামলার পর এনিয়েই জোর চর্চা চলছে সবখানে।
কি আছে ইরানের হাতে, এই প্রশ্নের উত্তর হন্য হয়ে খুঁজছে পশ্চিমারা। আপতত জানা গেছে, ইরানের হাতে রয়েছে বহু ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও ভয়েস অব আমেরিকার মতে, ইসরাইলে যেমন রয়েছে আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিঙ্গ এবং অ্যারোর মতো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, তেমনি ইরানের হাতে রয়েছে নানা নামের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এসবের মধ্যে গেলো শনিবার সর্বাধুনিক দুইটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সামনে এসেছে ইরান। এর একটির নাম ‘আরমান’ এবং অন্যটির নাম ‘আজরাখশ’।
এই দুই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখে পশ্চিমাদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ, আর কিছুই নয়। ইসরাইলের স্টেট অব আর্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ যদি হয় হয় বুনো ওল, তাহলে ইরানের এই দুইটি ব্যবস্থা হলো বাঘা তেঁতুল। নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরি ইরানের এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শনিবার রাজধানী তেহরানে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উম্মোচন করেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ-রেজা আশতিয়ানি।
এই দুটি সিস্টেমকে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অনুমপ শিল্প হিসাবে বর্ণনা করে আশতিয়ানি বলেন, মাঝারি পাল্লার উচ্চতর কৌশলগত আরমান সিস্টেমটি ১৮০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে তাদের ধ্বংস করতে পারে। আরমান সিস্টেম তিন মিনিটেরও কম সময়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এই ব্যবস্থায় শাহেদ সিরিজের তিনটি অত্যাধুনিক মিসাইল ব্যবহার করা হবে।
অন্যদিকে, আজরাখশ সিস্টেম ড্রোনসহ ছোট আকারের আকাশযানের হুমকি নিষ্ক্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা দেবে। দুই সিস্টেমেই রয়েছে উন্নত ত্রিমাত্রিক রাডার সিস্টেম, একটি অপটিক্যাল সার্চ সিস্টেম এবং অত্যন্ত নিখুঁত প্রযুক্তির শনাক্তকরণ ডিভাইস, যার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে শক্রুর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা যাবে। সিস্টেমটি বিভিন্ন যানবাহনে স্থাপন করা যায় এবং অপারেশনের দিন-রাতে ব্যবহার করা যায়।
ইরানের বার্তা সংস্থা ইরিনা জানিয়েছে, আরমান দিয়ে উড়ে আসা যে কোন ব্যালাস্টিক মিসাইলকে নিষ্ক্রিয় করা যাবে মাঝ আকাশেই। এই সিস্টেমে রাখা শাহেদ তিন মিসাইলটি আকাশে বিচরণ করে যে কোন তাপ পরিবাহী বস্তুকে শনাক্ত করে ধ্বংস করতে পারে। অন্যদিকে, আকাশ বেয়ে উড়ে আসা ড্রোনসহ নানা ধরনের ছোট খাটো হুমকিতে ব্যর্থ করে দেবে- আজরাখশ সিস্টেম।