সময় এখন রাহুল গান্ধীর। ভারতের রাজনীতিতে একের পর এক ম্যাজিক দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। লোকসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও চমক দেখাচ্ছের রাহুল গান্ধী ও তাঁর দল কংগ্রেস। সবশেষ চমক দেখালেন ভারতের কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মিরে। এই রাজ্যের বিধানসভায় জয়ী হয়েছে ফারুক আবদুল্লাহর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট।
অন্যদিকে, হরিয়ানায় সফল হলেও, জম্মু-কাশ্মিরে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। পাঁচ বছর ধরে নানা চেষ্টা সত্ত্বেও, সেখানে ক্ষমতায় আসতে পারল না কেন্দ্রের শাসক দল। নরেন্দ্র মোদীর ‘কাশ্মীর নীতি’ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যাত হলো। সেখানে ক্ষমতায় আসতে চলেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স (এসি), কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট। ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে শ্রীনগরের মসনদে বসতে চলেছেন ওমর আবদুল্লাহ।
অথচ, একটা সময় নির্বাচনে লড়তেও রাজি ছিলেন না ওমর আবদুল্লাহ। সোজা ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি একটি পূর্ণরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, কোনো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি নন। তবে ভোট শেষ হতেই বাবা ও কাশ্মিরের বর্ষীয়ান নেতা ফারুক আবদুল্লাহ জানিয়ে দেন, মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। তারা বিজেপির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। ওমর আব্দুল্লাহই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া, জম্মু-কাশ্মিরেএ বিধানসভা ভোটের প্রায় সব আসনের চূড়ান্ত ফলাফলই সন্ধ্যায় চলে আসে। মোট আসন সংখ্যা ৯০টি। ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের জোট জয়ী হয়েছে ৪৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ২৯টি। মেহবুবা মুফতির দল পিডিপি পেয়েছে মাত্র তিনটি আসন। আম আদমি পার্টি ও সিপিআইএম একটি করে আসন পেয়েছে। নির্দলীয় সাত, আর অন্য এক দল জিতেছে এক আসন।
ভোটের প্রাথমিক ফল আসতেই এনসি নেতা ফারুক আবদুল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ২০১৯ সালের পাঁচই আগস্ট কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ রায় দিয়েছে। ওমর আবদুল্লাহই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওমর গান্দরবাল ও বদগাম দুই আসন থেকেই জিতেছেন।
ওমর আব্দুল্লাহ আবার সদর্পে ঘোষণা করে দিয়েছেন, যারা কাশ্মিরে আমাদের শেষ করতে এসেছিল, তারা নিজেরাই নিশ্চিহ্ন।
বিজেপির জোটসঙ্গী হওয়ার খেসারত দিলো পিডিপি
১৯৯৯ সালে পিডিপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ সাঈদ। এর মাত্র তিন বছর পর, প্রথমবারের জন্য জম্মু-কাশ্মিরে সরকার গঠন করে তারা। সহায়তা করে কংগ্রেস। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও পিডিপি কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো নির্বাচনী লড়াইয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল মেহবুবা মুফতির দল।
নির্বাচনী ফল বলছে, এতদিন যে বিজবেহারা কেন্দ্রকে পিডিপির শক্ত ঘাঁটি, বিশেষ করে মুফতি পরিবারের গড় বলে মনে করা হতো, এবার সেখানকার জনগণও মেহবুবার দলকে হতাশ করেছেন। এবারের নির্বাচনে এই আসনে লড়াইয়ে নেমেছিলেন মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা মুফতি। কিন্তু তিনি হেরে যান। ইলতিজা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি জনগণের এই রায় মাথা পেতে নিচ্ছেন।
২০১৬ সাল থেকেই পিডিপির ভোট ব্যাংকে ধস নামতে শুরু করে। সেই সময় কাশ্মিরে পিডিপি ও বিজেপির জোট সরকার ছিল।
হিজবুল মুজাহিদীনের তরুণ নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর উপত্যকার বাসিন্দাদের একাংশ আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলন দমাতে সরকারের পক্ষ থেকে যে দমন-পীড়ন শুরু করা হয় বলে অভিযোগ, তাতে অসংখ্য সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়। ফলে পিডিপি-বিজেপি জোট জনভিত্তি কমতে থাকে।
এরপর, ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মির তার স্পেশাল স্ট্যাটাস ও রাজ্যের স্বীকৃতি হারায়। সেই সময় মাসের পর মাস জম্মু-কাশ্মিরের স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করা হয়। এই পরিস্থিতির জন্য বিজেপির পাশাপাশি পিডিপিকেও দায়ী করেন বহু মানুষ।
২০১৮ সাল পর্যন্ত এই দুই দলের জোট সরকার জম্মু-কাশ্মিরের প্রশাসনিক ক্ষমতায় ছিল। এবারের নির্বাচনে পিডিপির শোচনীয় পরাজয় গত ১০ বছরের ঘটনাক্রমের ফলশ্রুতি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।