বিশ্ব রাজনীতিতে একটা কথা প্রচলিত আছে। আর সেটি হলো, আমেরিকা যদি কারো বন্ধু হয়, তাহলে তার আর শত্রুর প্রয়োজন হয় না। এ কারণেই বিশ্বযুদ্ধে যতো সংঘাত আর সঙ্কট আছে, তার সঙ্গে কোন না কোন ভাবেই জড়িত আছে জড়িত আছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। লাতিন থেকে ইউরোপ এবং আফ্রিকা থেকে এশিয়া সবখানে মোড়ল আর দাদাগিরি করতে গিয়ে ঝামেলা পাকিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশটি।
আমেরিকার তৈরি কিংবা সমর্থিত বেশিরভাগ সংঘাতের পেছনেই রয়েছে দেশটির বাণিজ্যিক স্বার্থ। দেশে দেশে যুদ্ধ বাঁধিয়ে চালিয়ে যায় রমরমা অস্ত্র আর তেলের ব্যবসা। ইউক্রেন ও ইসরাইল এখন সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেও, পায়ে পা বাধিয়ে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার নামে চীনের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই তাইওয়ানকে অস্ত্র সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
তাইওয়ানের সাথে আনুষ্ঠানিক কোন কূটনৈতিক কোন সম্পর্ক না থাকলেও আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে নিরাপত্তার নামে কিছুদিন পরপরই বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র পাঠায় অঞ্চলটিতে। তবে আর ছাড় না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে শি জিনপিংয়ের দেশটি। সম্ভাব্য সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় প্রস্তুত করছে পারমাণবিক অস্ত্রের বিশাল এক ভান্ডারও।
গেল শুক্রবারই এশিয়া অঞ্চলে চীনের বেড়ে চলা সামরিক শক্তি মোকাবিলায় তাইওয়ানের জন্য আরও দুই বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। আর এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং। তাইওয়ানকে অস্ত্র দেয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করে দেশটি।
ছাড় না দিয়ে, এবার যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দেয়ার চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শি জিনপিংয়ের সরকার। তাইওয়ান ইস্যুতে ‘লাল রেখা’ বা রেড লাইন অতিক্রম না করতেও ওয়াশিংটনকে চূড়ান্ত বার্তা পাঠিয়েছে চীন। শুধু বার্তা পাঠিয়েই নয়, তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতিও শুরু করেছে দেশটি।
তাইওয়ান ঘিরে বেশ কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে চীনের। বেইজিংয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই তাইওয়ান সফরে আসেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। চীন বলছে, এশিয়া ও বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের আধিপত্য বাড়াতেই তাইওয়ানকে ব্যবহার করছে ওয়াশিংটন। আর যে কোন সময় এই উত্তেজনা সংঘাতে পরিণত হতে পারে।
সম্ভাব্য সংঘাতকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় তাই নিজেদের সামরিক শক্তি অপ্রতিরোধ্য করে তুলছে চীন। এমনিই বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তির অধিকারী শি’র দেশ। এরমধ্যেও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়াতে উৎপাদনে অবিশ্বাস্য গতিতে কাজ শুরু করেছে বেইজিং। এক প্রতিবেদনে মার্কিনিরা জানিয়েছিলো, ২০২০ সালেও চীনের হাতে ২০০ পারমাণবিক অস্ত্র ছিলো।
তবে গত ১০ বছরে বেইজিং সেই অস্ত্র সংখ্যা দ্বিগুণ করতে পারে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মাত্র চার বছরেরই চীনের হাতে এখন পাঁচশো পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে শঙ্কা জানিয়েছে বাইডেনের প্রশাসন। আর, চীনের হাতে থাকা এসব পরমানু অস্ত্রের পাল্লা যুক্তরাষ্ট্রেও আঘাত হানতে সক্ষম বলেও মার্কিন গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আতঙ্কের কারণ হয়ে এসেছে প্রতিবেদনের অন্য একটি অংশ। যেখানে মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, শিগগিরই নিজেদের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের নীতিতে পরিবর্তন আনছে চীন। প্রথমে পরমাণু হামলা না চালানোর যে নীতি এতদিন বেইজিঙের ছিল তা খুব দ্রুতই বাতিল করতে চলেছেন শি জিনপিং। তাইওয়ানের সাথে যে কোন সংঘাতেও চীন তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলেও উঠে এসেছে মার্কিন প্রতিবেদনে।