১৬ ডিসেম্বর ৫৩তম মহান বিজয় দিবস পালন করলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা। এ উপলক্ষে সোমবার সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ছিলো নানা অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার কর্মকর্তারা।
মহান বিজয় দিবসের দিনে বিশেষ অতিথি হয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিজন মিলিয়ে ১৭ জনের এক প্রতিনিধি দল। যদিও বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সে দেশ থেকে প্রতিনিধি দলের যোগ দেওয়া নিয়ে সাময়িক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিলো।
এদিন সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের কাছে অবস্থিত বিজয় স্মারক স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন ভারতের সাবেক স্থলসেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায় চৌধুরী, স্থলসেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটাটেন্ট জেনারেল রাম চন্দ্র তিওয়ারীসহ দেশটির তিন বাহিনীর কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের তরফে শহীদ স্মৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম চৌধুরী এনডিসি (অব:) এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান।
সবশেষে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ডঃ সি ভি আনন্দ বোস। এরপর একটি ফটোসেশনে উপস্থিত থাকেন রাজ্যপাল সহ দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
এরপর সেনাবাহিনীর মাঠে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি। সেদিনকার সেই স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্য দেখে অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
পরে ভারতীয় গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বিপি (অব:) বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ- আমাদের দু’দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে দরিদ্রতা। আমাদের দুই দেশকেই একত্রিত হয়ে সেই দারিদ্রতা দূর করতে হবে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকলে, ভালোবাসা না থাকলে দুদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সাম্প্রতিক কিছু ইস্যুতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে কর্নেল কাজী সাজ্জাদ বলেন, ইতিহাসের অনেকগুলি পর্যায় আছে। সম্পর্কের উত্থান-পতন দুটোই হয়। পঁচাত্তরের নির্মম গণহত্যার পর একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল আমরা সেটা ওভারকাম করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অনেকগুলো সমস্যা হয়েছে, ভারতেও পট পরিবর্তন হয়েছে। তারপরেও আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্ব রেখেছি, আমরা একই রকম আছি। আগেও ভারতে এসেছিলাম কিন্তু এখন এসে দেখছি বন্ধুত্ব সেই একই রকম আছে। ভারতের মানুষ আমাকে ভালোবাসছে, এটাই ইতিহাস। ইতিহাস দুই-এক বছরে হয় না, এটা হাজার বছরে হয়। দুই দেশের মধ্যে ৫৩ বছরের ইতিহাস।
তার অভিমত, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক হয় মানুষের ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে, হৃদয় দিয়ে। সরকার দিয়ে সব কিছু হয় না। মুক্তিযুদ্ধের সময় কয়েক কোটি মানুষকে ভারতের মানুষ আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা তো আমাদেরই নাগরিক। আপনাদের অনেক সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু বন্ধুত্ব রয়ে গেছে। ভারত বন্ধুপ্রতীম দেশ। বন্ধুত্বের মধ্যে চির ধরাটা অতো সহজ নয়, ইতিহাসের মধ্যে চির ধরাটা এত সহজ নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে অনেকেই অনেক রকম বিবৃতি দেয়। সেই বিবৃতি এককভাবে কিংবা সম্মিলিতভাবে হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। গণতন্ত্র এদেশে আসবে থাকবে।
এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ তারা নিজেদের স্বার্থ দেখবে। ভালোভাবে বেঁচে থাকা। একটা দরিদ্র দেশ আমরা মধ্যম আয়ের দেশ কাতারে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমার সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে আলী সাজ্জাদ বলেন, হিন্দুরা বাংলাদেশের নাগরিক, সেখানে কোথাও লেখা নেই যে ধর্মের ভিত্তিতে তাদেরকে নাগরিক দেওয়া হবে। এটা অবস্থানের ভিত্তিতে হচ্ছে। হিন্দুরা আমাদের ভাই, তারা আমাদের দেশে থাকবে। বর্তমান ঘটনাটি কিছু সময়ের জন্য হয়েছে, আমি মনে করি আগামী দিনে সম্পর্ক আরও ভালো হবে।
তিনি আরও বলেছেন, এই অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং আমরা সঠিকভাবে সামনের দিকে এগোতে পারবো। তার অভিমত জনগণ ‘ওয়ান ম্যান ওয়ান ইলেকশন’ এর জন্য দাঁড়িয়ে গেলে, তবেই জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। এটাই গণতন্ত্র। সামনের দিনগুলো সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।